করোনাভাইরাসের তাণ্ডব ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের জন্য গোটা বিশ্বজুড়ে যে অর্থনৈতিক মন্দা চলছে, তখন বাংলাদেশের মানুষকে কষ্ট থেকে দূরে রাখতে সরকারের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সংকটকালেও বাংলাদেশ যে এগিয়ে যেতে পারে, তা প্রমাণিত বলেও জানান তিনি।
বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে ‘বাংলাদেশ ডেল্টা প্ল্যান-২১০০ ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স: ইস্যুস অ্যান্ড চ্যালেঞ্জেস অব ইমপ্লিমেন্টেশন’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী ।
অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশ পিছিয়ে থাকবে না। বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে এবং আমরা সেটা প্রমাণ করেছি। একদিকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ, অপরদিকে করোনাভাইরাসের আঘাত। তারপর এদিকে হলো আবার ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ, যার ফলাফল বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা। এর মধ্যেও আমরা প্রচেষ্টা চালাচ্ছি আমাদের দেশের মানুষের যেন কোনো রকম কষ্ট না হয়। তাদের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, অর্থনীতিকে গতিশীল রাখা এবং দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া।’
করোনা সংকট মোকাবিলায় সরকারের দেয়া বিভিন্ন প্রণোদনার কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
আগামী প্রজন্মের জন্য সুরক্ষিত বাংলাদেশ নিশ্চিত করতেই ডেল্টা প্ল্যান ২১০০ প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে সরকার কাজ করছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশ একটি ব-দ্বীপ। কাজেই এই ব-দ্বীপটাকে আমাদের এমনভাবে গড়ে তুলতে হবে, যাতে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম সুন্দরভাবে বাঁচতে পারে। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা পদক্ষেপ নিয়েছি।’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা নিয়েই আমরা এগিয়ে যাচ্ছি, বাংলাদেশকে যাতে আমরা সুরক্ষিত করতে পারি। শুধু আজকের জন্য না, আমাদের আগামী প্রজন্মের জন্য বাংলাদেশ যেন টেকসই হয়, অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি হয় এবং অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি আমরা অর্জন করতে পারি।’
ডেল্টা প্ল্যান বাস্তবায়নে বাংলাদেশকে সহায়তা দিতে এগিয়ে আসায় নেদারল্যান্ডসকে ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী। এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বন্ধুপ্রতিম অন্যান্য দেশগুলোকেও এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।
দেশের ভৌগোলিক অবস্থানের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রতিনিয়ত আমাদের প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে মোকাবিলা করে চলতে হয়। বন্যা, খরা, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, নদীভাঙন, লবণাক্ততা, পাহাড় ধস প্রতিনিয়ত আমাদের মোকাবিলা করতে হচ্ছে।’
জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার বিষয়টি তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতে সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। অথচ জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ কোনোমতেই দায়ী নয়, কিন্তু বাংলাদেশকে এ আঘাতটা সহ্য করতে হবে। সে ক্ষেত্রটা চিন্তা করে আমরা বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছি। কিছু স্বল্পমেয়াদি, কিছু মধ্যমেয়াদি ও কিছু দীর্ঘমেয়াদি।’
এ ক্ষেত্রেও ডেল্টা প্ল্যান বাস্তবায়ন গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘ডেল্টা প্ল্যান আমরা এই কারণে নিয়েছি, যাতে শত বছরে বাংলাদেশ টেকসই হয়। আমরা চাই, আমাদের দেশটা এগিয়ে যাবে, আরও উন্নত হবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জলবায়ু অভিঘাত থেকে আমাদের জনসংখ্যাকে বাঁচানো, পাশাপাশি তাদের খাদ্য, বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষা, কর্মসংস্থান—মৌলিক চাহিদাগুলো যেন আমরা পূরণ করতে পারি, সে বিষয়ে বিভিন্ন পরিকল্পনা নিয়ে তা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি।’