দীর্ঘপথ যাত্রা শেষ করে অবশেষে ভাসানচরে পা রাখলেন ১ হাজার ৬৪২ রোহিঙ্গা। শুক্রবার (৪ ডিসেম্বর) দুপুরের দিকে তারা সেখানে পৌঁছান। করোনার বাড়তি সতর্কতার জন্য প্রথমে সবার শরীরের তাপমাত্রা মাপা হয়। এরপর হাত ধুয়ে জেটি থেকে গাড়িতে করে তাদের আবাসস্থলে দিকে নিয়ে যাওয়া হয়।
সেখানে নৌবাহিনীর সদস্যরা শিশুদের চলাচলের জন্য সাহায্য করেন।
রোহিঙ্গাদের বরণ করে নিতেও ভাসানচরে নানা ব্যানার ফেস্টুন লাগানো হয়। সেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যানার ফেস্টুনও লক্ষ্য করা যায়। সেইসব ফেস্টুনে শেখ হাসিনাকে মাদার অব হিউমিনিটি হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
এর আগে প্রথম দলটি চট্টগ্রাম থেকে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বোট ক্লাব থেকে ভাসানচরের উদ্দেশে রওনা দেয়। এই দলে নারী-পুরুষ-শিশু মিলিয়ে মোট ১ হাজার ৬৪২ জন রোহিঙ্গা রয়েছে।
এই রোহিঙ্গারা বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ছয়টি ও সেনাবাহিনীর একটি জাহাজে করে যাত্রা করেছে। দুপুর নাগাদ তাদের ভাসানচরে পৌঁছানোর কথা ছিল।
তাদের স্থানান্তর নিয়ে নৌবাহিনীর কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার এম কে জামান শামীম বলেন, নৌবাহিনীর ছয়টি এলসিইউতে ও সেনাবাহিনীর জাহাজ শক্তি সঞ্চারে করে রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে নেওয়া হচ্ছে। আর সকালেই তাদের মালপত্র নৌবাহিনীর জাহাজ শাহ মখদুম ও শাহ পরানে করে ভাসানচরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের এই বহরের সঙ্গে নৌবাহিনীর দুটি ও কোস্ট গার্ডের দুটি জাহাজ রয়েছে। এছাড়া দুটি হাইস্পিড বোট, দুটি ডিফেন্ডার বোট ও চারটি কান্ট্রি বোটও রয়েছে।’
দফায় দফায় কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবির থেকে ১ লাখ রোহিঙ্গাকে নোয়াখালীর হাতিয়ায় জেগে ওঠা দ্বীপ ভাসানচরে নেওয়া হচ্ছে। আজ থেকেই শুরু হলো এ স্থানান্তরের প্রক্রিয়া।
জানা গেছে,বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে রোহিঙ্গাদের বহনকারী ৩৯টি বাস উখিয়া কলেজের মাঠ থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশে রওনা দেয়। এর মধ্যে ১ হাজার ৬৩৫ জন রোহিঙ্গা নারী, শিশু ও পুরুষ রাতে চট্টগ্রামে পৌঁছায়। এই সকল রোহিঙ্গাদের পতেঙ্গা বিএএফ শাহীন কলেজ মাঠ ও বোট ক্লাব এবং এর আশপাশের এলাকায় অস্থায়ী ট্রানজিট শিবিরে রাখা হয়।
সরকারি সূত্র থেকে জানা যায়, সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে বাংলাদেশ সরকার এক লাখ রোহিঙ্গার জন্য ভাসানচরে অবকাঠামোসহ সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করেছে। ভাসানচরে যাওয়া রোহিঙ্গাদের জন্য খাবার, নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীসহ অন্তত এক মাসের রসদ দ্বীপটিতে মজুত রাখা হয়েছে।
এদিকে রোহিঙ্গাদের একটি অংশকে ভাসানচরে সরিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়াটিকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে জাতিসংঘ। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো এই স্থানান্তর বন্ধের দাবিও জানিয়েছে।
এ প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, রোহিঙ্গাদের কাউকে জোর করে ভাসানচরে নেওয়া হচ্ছে না। যারা সরকারের আহ্বানে সাড়া দিয়েছে, শুধু তাদেরই স্থানান্তর করা হচ্ছে।