প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতা মানেই যেন, রহস্যে ঘেরা এক পৌরাণিক জগত। মিশরের নাম শুনলেই আমাদের মানসপটে ভেসে ওঠে ‘পিরামিড’ ও ‘মমি’। তবে মনে মনে উঁকি দেয় আরও একজনের কথা। তিনি হলেন মিশরীয় সম্রাট ফারাও।
মিশরের উচ্চ ও নিম্নভূমির শাসক ছিলেন ফারাও। মিশরের সকল ভূমির মালিক ছিলেন তিনি। এছাড়া আইন প্রণয়ন, কর সংগ্রহ ও বহিঃশত্রুর হাত থেকে মিশরের জনগণকে রক্ষার দায়িত্বও তিনিই পালন করতেন। আবার দেবতার সাথে আমজনতার যোগসূত্র স্থাপনের কাজটিও ফারাওই করতেন।
১৯২২ সালে হাওয়ার্ড কার্টার, ফারাও সম্রাট তুতানখামেনের সমাধি আবিস্কারের পর, প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতার গবেষণাকে নিয়ে যান অনন্য মাত্রায়। বিভিন্ন মিশরীয় শাসকের মমির সাথে সাথে উন্মোচিত হতে থাকে একের পর এক রহস্য।
তবে ১৮৮১ সালে আবিস্কারের পরও দুর্বল কাঠামোর কারণে ফারাও আমেনহোটেপের মমি নিয়ে তেমন একটা গবেষণার সুযোগ পাননি ইতিহাসবিদরা। অত্যাধুনিক প্রযুক্তির কল্যাণে অবশেষে কাটলো সে জটিলতা। উন্মোচিত হলো প্রথম আমেনহোটেপের মমি রহস্য।
ফারাও আমেনহোতেপের মমি খুব যত্ন করে মোড়ানো হয়েছিল। ফুলের নকশার সঙ্গে বানানো হয়েছিল মুখোশ। পুরো মমিকরণটা এতই পরিপাটি ছিল যে, বিশেষজ্ঞরাও আবরণ উন্মোচন করতে বিব্রতবোধ করেছেন। এতো সুন্দর মমি নষ্ট করার দায় কেউ নিতে চাননি।
আমেনহোতেপেকে সমাধিস্থ করার তিন হাজার বছর পর এই প্রথম ডিজিটাল পদ্ধতিতে তাকে উন্মোচনিত করা হলো। মমিটিকে পুরোপুরি অক্ষুন্ন রেখে, থ্রিডি কম্পিউটেড টোমোগ্রাফির মাধ্যমে এর শারীরিক রহস্য উন্মোচন করা হয়। তিন হাজারেরও বেশি সময় ধরে ঢেকে রাখা এই ফারাও রাজার চেহারাও উন্মুক্ত হলো এর মাধ্যমে।
মিসরের কায়রো বিশ্ববিদ্যালয়ের রেডিওলজির অধ্যাপক সাহার সেলিম এই রহস্য উন্মোচন করেন। সিটি স্ক্যানিং প্রযুক্তি ব্যবহার করে যে ফলাফল পাওয়া গেছে, তা অভূতপূর্ব এবং আকর্ষণীয় বলে জানান এই অধ্যাপক।
সেলিম বলেন, আমেনহোতেপ প্রায় ৩৫ বছর জীবিত ছিলেন। তিনি আনুমানিক ১৬৯ সেমি লম্বা ছিলেন, তার খতনা করানো ছিল এবং দাঁত ছিল খুবই সুন্দর।
আমেনহোতেপ শরীরে সবসময় ৩০টি তাবিজ, সোনার পুঁতিসহ একটি স্বর্ণের কোমরবন্ধ পরতেন। শারীরিক গঠনের দিক থেকে তাঁর বাবার সঙ্গে বেশ মিল ছিল। আমেনহোতেপের সরু চিবুক, ছোট সরু নাক, কোঁকড়ানো চুল এবং দাঁত হালকাভাবে ওপরের দিকে ছিল বলেও জানান এই গবেষক।
এই গবেষণা থেকে ফারাওদের সম্পর্কে আশ্চর্যজনক এক তথ্য পাওয়া গেছে। যেখান থেকে জানা গেছে, খতনা শুধু মুসলিম কিংবা ইহুদিদের ধর্মীয় প্রথাই নয়, এর প্রচলন ছিল ফারাও রাজপরিবারেও। খোদ আমেনহোতেপ খতনা করা ছিল বলে দাবি গবেষকদের।
গবেষকরা বলছেন, আমেনহোতেপ শারীরিকভাবে সুস্থ ছিলেন। খুব সম্ভবত হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যু হয়েছে তার। আমেনহোতেপের শরীরে কোনো আঘাত কিংবা অসুস্থতাজনিত কোনো ক্ষত পাননি বিশেষজ্ঞরা।
আমেনহোতেপ প্রথম ছিলেন ১৮তম রাজবংশের দ্বিতীয় রাজা। তার বাবার নাম আহমোস প্রথম। বাবার মৃত্যুর পর সিংহাসনে আরোহণ করেন তিনি। প্রায় ২১ বছর মিসরে শাসন করেছিলেন আমেনহোতেপ। তার নামের অর্থ ‘আমুন (দেবতা) সন্তুষ্ট’।
আমেনহোতেপের মাধ্যমে ফারাওদের মমি তৈরির নতুন ধারার সূচনা হলো মিশরে। মমি থেকে প্রাপ্ত তথ্য সেই ইতিহাস খুঁজে পেতে বড় ধরনের সহায়তা করবে বলেও মনে করেন গবেষকরা।
https://www.facebook.com/bbsbangla.news/videos/450584223198912