যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা মঙ্গলের আকাশে সফলভাবে তাদের একটি ছোট হেলিকপ্টার উড়িয়েছে। পৃথিবী থেকে নিয়ন্ত্রণ করা ‘ইনজেনুইটি‘ নামের এই হেলিকপ্টারটি প্রায় এক মিনিট ওড়ানো হয়েছে মঙ্গলের আকাশে। এর মাধ্যমে মানুষ প্রথমবারের মতো অন্য কোনো গ্রহে তাদের উড়োযান ওড়ালো। এই ঘটনাকে বিজ্ঞানীরা ‘রাইট ব্রাদার্স মুহূর্ত’ বলে আখ্যায়িত করেছেন।
বার্তা সংস্থা এএফপি নাসার বরাত দিয়ে জানায়, গ্রিনিচ সময় সোমবার (১৯ এপ্রিল) ভোররাত ৩টা ৩৪ মিনিটে প্রায় দুই কেজি ওজনের হেলিকপ্টারটি মঙ্গলের আকাশে ডানা মেলে। মঙ্গলের মাটিতে ইনজেনুইটি নিজের ছায়ার ছবি তুলে পৃথিবীতে পাঠালে নাসার নিয়ন্ত্রণকক্ষে সবাই উল্লাসে মেতে ওঠে। মঙ্গলে বাতাসের ঘনত্ব পৃথিবীর চেয়ে ৯৯ শতাংশ কম। সৌরজগতের লাল গ্রহটির কম ঘনত্বের বাতাসে উড়োযানটি উড়তে পারবে কি না, তা নিয়ে আশঙ্কা ছিল বিজ্ঞানীদের। তবে সে আশঙ্কাকে উড়িয়ে দিয়ে মঙ্গলপৃষ্ঠের ১০ ফুট ওপর দিয়ে ৩৯ দশমিক ১ সেকেন্ড ওড়ার পর আবার মঙ্গলের মাটিতে অবতরণ করে ইনজেনুইটি নামের হেলিকপ্টারটি।
এর আগে, গত বছরের ৩০ জুলাই পৃথিবী থেকে উৎক্ষেপণ করা হয় নাসার রকেট পারসেভারেন্স। এরপর এ বছর ১৮ ফেব্রুয়ারি পারসেভারেন্স সফলভাবে মঙ্গলপৃষ্ঠে অবতরণ করে। এই মঙ্গলযানের পেটে যুক্ত ছিল হেলিকপ্টার ‘ইনজেনুই’টি। মঙ্গলপৃষ্ঠে অবতরণের দুই মাস পর গতকাল ডানা মেলল হেলিকপ্টারটি। স্বয়ংক্রিয়ভাবে উড়াল দেওয়ার পর উড়োযানটি পৃথিবীতে তথ্য ও ছবি পাঠায়। সে তথ্য ধরা দেয় ২৭ কোটি ৮০ লাখ কিলোমিটার দূরত্ব পাড়ি দিয়ে পৃথিবীর বুকে নাসার অ্যান্টেনায়। এরপর তথ্যগুলো প্রক্রিয়াকরণ করতে তিন ঘণ্টারও বেশি সময় লেগে যায়।
ইনজেনুইটি যখন ডানা মেলে মঙ্গলের আকাশে, তখন নাসার জেট প্রপালশন ল্যাবরেটরিতে যেন শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি। হেলিকপ্টারটি উড়ে আবার উড্ডয়নের জায়গায় এসে সফলভাবে অবতরণের পর ঘোষণা আসে যে, এটি প্রথমবারের মতো সফলভাবে উড়েছে। ভিনগ্রহে এই প্রথম মানুষের কোনো উড়োযান উড়ল। এরপরই উল্লাস আর করতালিতে ফেটে পড়েন ল্যাবরেটরির সবাই। এর আগে ১৮ ফেব্রুয়ারি একই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল মঙ্গলে পারসেভারেন্সের অবতরণের সময়।
ইনজেনুইটির গবেষক দলের প্রধান প্রকৌশলী মিমি অং ১৯০৩ সালে পৃথিবীর বুকে রাইট ব্রাদার্সদের প্রথম ওড়ানো উড়োযানের কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘আমরা এখন বলতে পারব, মানুষ অন্য গ্রহে উড়োযান উড়িয়েছে। অনেকদিন ধরেই ‘রাইট ব্রাদার্স’ মুহুর্তের জন্য অপেক্ষা করছিলাম আমরা।’
নাসার গবেষকরা এই জেট প্রপালশন ল্যাবরেটরিতে ছয় বছর অক্লান্ত পরিশ্রম করে এই অভিযানের পরিকল্পনা ও সার্বিক বিষয় এগিয়ে নিয়েছেন। ইনজেনুইটির সফল উড়ালে প্রায় শতভাগই ফলপ্রসূ হলো তাদের সেই পরিশ্রম। এবার অপেক্ষা পারসেভারেন্সের পুরো অভিযান সফল হওয়ার।
উল্লেখ্য, ১৯০৩ সালের ১৭ ডিসেম্বর প্রথমবারের মতো মার্কিন সহোদর অরভিল রাইট ও উইলবার রাইট উড়োজাহাজ উড়িয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেন। তাদের আবিষ্কারের পথ ধরে মানুষের কাছে পৃথিবী যেন একেবারেই ছোট হয়ে আসে। হাজার মাইলের পথ যেন মাত্র কয়েক ঘণ্টার যাত্রাপথে পরিণত হয়।
ভবিষ্যতে নাসার হেলিকপ্টার ওড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে শনির ৮২টি উপগ্রহের একটি, টাইটানে। ২০৩০ সালে মিশনটি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।