শরীর সুস্থ রাখতে নিয়মিত শরীরচর্চা করার কোন বিকল্প নেই। আর, যোগাসন হতে পারে শরীরচর্চার অন্যতম মাধ্যম। তবে, যোগাসন করলেই হবে না, সঠিকভাবে, নিয়ম মেনে যোগাসন অভ্যাস করতে হবে। এখানে যোগাসনের কিছু নিয়মকানুন দেওয়া হল-
১। ৫/৬ বছর বয়স থেকে শুরু করে জীবনের শেষদিন পর্যন্ত যোগ ব্যায়াম অভ্যাস করা যায়। শুধু প্রয়োজন অনুযায়ী কয়েকটি আসন বেছে নিতে হবে। সব বয়সে সব রকম আসন করা উচিত নয়। অল্পবয়সী ছেলে-মেয়েদের কোন আসন দুইবারের বেশি করা ঠিক নয়।
২।সকাল, সন্ধ্যা ও গোসলের পূর্বে বা রাতে যেকোনো সময় যোগ ব্যায়াম করা যায়। তবে সে সময় যেন ভরপেট না থাকে। অল্প কিছু খেয়ে আধ ঘন্টা পরে আসন করা যেতে পারে।তবে প্রাণায়াম খালি পেটে অভ্যাস করাই বাঞ্ছনীয়। যাদের কোষ্ঠকাঠিন্য, পেট ফাঁপা প্রভৃতি রোগ আছে, তারা সকালে ঘুম থেকে উঠেই বিছানায় কয়েকটি নির্দিষ্ট আসন করতে পারে। যাদের অনিদ্রা রোগ আছে, রাতে খাবার পর শোবার পূর্বে কিছুক্ষণ বজ্রাসন করলে ভালো ফল পাওয়া যেতে পারে। এ ছাড়া ভরপেট খাওয়ার পরও কিছুক্ষণ বজ্রাসনে বসলে খাদ্য হজম বা পরিপাকক্রিয়া সহজ হয়।
৪। আসন বা প্রাণায়ামে একটি ভঙ্গিমায় বা প্রক্রিয়ায় একবারে যতটুকু সময় সহজভাবে করা যায় বা থাকা যায়, ঠিক ততটুকু সময় করা বাঞ্ছনীয়। তবে কোন ক্ষেত্রে কয়েকটি নির্দিষ্ট আসন ছাড়া একবারে এক মিনিটের বেশি থাকা উচিত নয়। পদ্মাসন, ধ্যানাসন, সিদ্ধাসন ও বজ্রাসনে ইচ্ছেমতো সময় নেওয়া যেতে পারে।
৫। একবারে ৭-৮ টির বেশি আসন অভ্যাস করা ঠিক নয়। আসনের সঙ্গে বয়স অনুযায়ী ও প্রয়োজন মত দু-একটি প্রাণায়াম অভ্যাস করলে অল্প সময়ে আরো ভালো ফল পাওয়া যায়। এক একটি আসন অভ্যাসের পর প্রয়োজন মত শবাসনে বিশ্রাম নিতে হবে। ৫-৭ মিনিট খালি হাতে কিছু ব্যায়ামের পর আসন ফল খুব দ্রুত পাওয়া যায়। কিন্তু কোন শ্রমসাধ্য কাজ বা ব্যায়ামের পর বিশ্রাম না নিয়ে কোন প্রকার যোগ ব্যায়াম করা উচিত নয়। সপ্তাহে একদিন বিশ্রাম নেয়া উচিত।
৬। আসন অভ্যাসকালে জোর করে বা ঝাঁকুনি দিয়ে কোন ভঙ্গি বা প্রক্রিয়া করা ঠিক নয়।
৭।আসন অভ্যাসকালে শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক থাকবে। কিন্তু প্রাণায়ামে নিয়মানুযায়ী শ্বাস-প্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
৮। কম্বল, প্যাড বা পাতলা তোষকের উপর আসন অভ্যাস করা বাঞ্ছনীয়। শক্ত মাটি বা পাকামেঝেতে অভ্যাস করলে যেকোনো সময়ে দেহে চোট লাগতে পারে। প্রয়োজনে ম্যাট ব্যবহার করতে পারেন।
৯। আলো-বাতাসহীন বা বদ্ধ ঘরে যোগ ব্যায়াম অভ্যাস করা ঠিক নয়। এমন জায়গায় অভ্যাস করার চেষ্টা করতে হবে, যেখানে বাতাসের সাথে প্রচুর অক্সিজেন নেওয়া যায়।
১০। মেয়েদের ক্ষেত্রে সন্তানসম্ভবা হলে তিন মাস পর্যন্ত কিছু সহজ আসন বা প্রাণায়াম করা যেতে পারে।সন্তান প্রসবের তিন মাস পর আবার ধীরে ধীরে সব আসন অভ্যাস করা বাঞ্ছনীয়। গর্ভাবস্থায় সকাল ও সন্ধ্যায় খোলা জায়গায় পায়চারি করা বিশেষ উপকারী।
১২। আসন অভ্যাসকালে এমন কোন পোশাক পরা উচিত নয় যাতে রক্ত চলাচলে ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়।
১৩। যোগ-ব্যায়াম অভ্যাসকালে কথা বলা বা অন্যমনস্ক হওয়া ঠিক নয়। কারণ মনের সঙ্গে দেহের ঘনিষ্ঠ সম্বন্ধ যোগ ব্যায়ামের মূলমন্ত্র। একাগ্রতাই কাঙ্খিত ফল এনে দিতে পারে।
১৪। যোগ ব্যায়ামে তাড়াতাড়ি ফল পাবার আশা করা ঠিক নয়। এতে বিশ্বাস ও ধৈর্য্যের একান্ত প্রয়োজন। নিয়মিত ও নিয়মমতো যোগ-ব্যায়াম অভ্যাসে সুফল আসবেই।
যতটা সম্ভব মন প্রফুল্ল রাখা বাঞ্ছনীয়। দুশ্চিন্তা যেন মনে না আসে। যোগব্যায়াম শুরু করে দিন যোগাসনের নিয়মকানুন জেনে আর নিজের উপর আস্থা রেখে এগিয়ে যান।