অপ্রয়োজনীয় সিজারিয়ান সেকশন রোধে গাইডলাইন এবং স্বাভাবিক প্রসবের ব্যাপক প্রচারণা ছয় মাসের মধ্যে চূড়ান্ত করে ব্যাপকভাবে প্রচার করতে নিদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
এ বিষয়ে জারি করা রুল নিষ্পত্তি করে বৃহস্পতিবার বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি কাজী জিনাত হকের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন।
আদালতে আবেদনের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার রাশনা ইমাম। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাশ গুপ্ত।
এ বিষয়ে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন যুক্ত করে ২০১৯ সালের জুন মাসে বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্টের পক্ষে তাদের আইন উপদেষ্টা এস এম রেজাউল করিম এ রিট করেন।
ওই বছরের ৩০ জুন হাইকোর্ট রুল জারি করে নীতিমালা তৈরির নিদেশ দেন। পরে গাইডলাইন করে আদালতে দাখিল কর হয়।
রাশনা ইমাম বলেন, অপ্রয়োজনীয় যে সি-সেকশনগুলো দেখছি, সে বিষয়ে ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশনের মতে শতকরা ১০ থেকে ১৫ শতাংশের বেশি সি-সেকশন কোনো দেশেরই প্রয়োজনীয় হতে পারে না। বাংলাদেশে এর হার বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে ৮৩ শতাংশ ও সরকারি হাসপাতালে ৩৫ শতাংশ। এনজিও হাসপাতালগুলোতে ৩৯ শতাংশ। এই যে একটা অ্যালার্মিং রাইজ, রেটটা যে বাড়ছে এটা থামানোর জন্য এ মামলা।
২০১৯ সালের ২১ জুন বিবিসি বাংলায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ‘সেভ দ্য চিলড্রেন’ বলছে বাংলাদেশে গত দুই বছরে শিশু জন্মের ক্ষেত্রে সিজারিয়ানের হার বেড়েছে ৫১ শতাংশ।
বিষয়টি অপ্রয়োজনীয় অস্ত্রোপচার উল্লেখ করে সংস্থাটি বলছে, এতে বাবা-মায়েদের সন্তান জন্মদানে ব্যাপক খরচের ভার বহন করতে হচ্ছে।
সিজারিয়ানে সন্তান জন্মদানে রয়েছে নানা রকম ঝুঁকি, বলছে সেভ দ্য চিলড্রেন। সংস্থাটি তার কয়েকটি তুলে ধরেছে প্রতিবেদনে।
এছাড়া মায়ের বুকের দুধ পান করার জন্য মায়ের সঙ্গে শিশুর যে শারীরিক নৈকট্যে আসা দরকার সিজারিয়ান হলে সেটি প্রয়োজনের তুলনায় দেরিতে ঘটে। কারণ মায়ের সুস্থ হয়ে ওঠার জন্য শিশুকে তখন কিছু সময় দূরে রাখা হয়। একদম শুরুর দিকে মায়ের বুক দুধের বাড়তি উপকারিতা রয়েছে। তা থেকে সে বঞ্চিত হয়।
বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে যত শিশু জন্ম নেয় তার ৮০ শতাংশই হয় অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে।
সংস্থাটি আরও বলছে, ২০১৮ সালে যত সিজারিয়ান হয়েছে তার ৭৭ শতাংশই চিকিৎসাগতভাবে অপ্রয়োজনীয় ছিল। কিন্তু তারপরও এমন সিজারিয়ান হচ্ছে।
প্রতিবেদনটিতে আরো বলা হয়, ২০০৪ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত বাংলাদেশে প্রসবকালীন অস্ত্রোপচার ৪ থেকে ৩১ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে।