নির্বাচনে অংশ নেওয়া বা না নেওয়া রাজনৈতিক দলের ইচ্ছাধীন বিষয় মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র আছে, নির্বাচন কমিশন আছে। যাদের ইচ্ছে নির্বাচন করবে। আর নির্বাচন করার মতো শক্তি যাদের না থাকে তারা হয়তো নির্বাচন করবে না। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ নির্বাচন করবে। তারা ভোট দেবে। আর ভোট চুরি করলে তারা মেনে নেয় না।
শনিবার (২৬ নভেম্বর) রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মহিলা আওয়ামী লীগের ষষ্ঠ ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
বিএনপির প্রতি ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, (১৯৯৬ সালের) ১৫ ফেব্রুয়ারি ভোট চুরির জন্য দেশের মানুষ খালেদা জিয়াকে (ক্ষমতা থেকে) টেনে নামিয়েছিল। ৩০ মার্চ জনগণের আন্দোলনে ক্ষমতা থেকে নামতে বাধ্য হয়েছিল। ভোট চোররা ভোট চুরি করতেই জানে। তাই আমি আমাদের মেয়েদের বলবো, ভোটের অধিকার সবার। যেকোনও নির্বাচনে আমাদের মহিলারা শন্তিপূর্ণভাবে ভোট দেবে। গণতান্ত্রিক অধিকার ও সাংবিধানিক অধিকার প্রয়োগ করবে।
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার জনগণের জন্য কাজ করে। জনগণের কল্যাণই তাদের একমাত্র লক্ষ্য। অপর পক্ষে বিএনপি কী করে? তারা ক্ষমতায় আসা মানে অত্যাচার নির্যাতন। ২০০১ সালের নির্বাচনে কত অত্যাচার-নির্যাতন করেছে তারা। সেসব আমরা কীভাবে ভুলে যাবো?
বিএনপির সঙ্গে সংলাপের সম্ভাবনা প্রকারান্তরে নাকচ করে দিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, অনেকে বলেন ডায়ালগ করতে হবে। আলোচনা করতে হবে। কাদের সঙ্গে? ওই বিএনপি, খালেদা জিয়া-তারেক জিয়া? সাজাপ্রাপ্ত আসামি। যারা গ্রেনেড হামলা করে আমাকে হত্যার চেষ্টা করেছে। এখন ওই দুর্নীতিবাজ-সাজাপ্রাপ্ত, এতিমের অর্থ আত্মসাতিকারী, আর অর্থ ও অস্ত্র পাচারকারী, গ্রেনেড হামলাকারী, আইভি রহমানের হত্যাকারী। আর জিয়াউর রহমান ছিল আমার বাবার হত্যাকারী। আর এদের সঙ্গে ডায়ালগ করতে হবে! আলোচনা করতে হবে! আবার মানবাধিকারের কথাও বলেন। এটা কেমন ধরনের কথা- জিজ্ঞাসা করি।
তিনি বলেন, খালেদা জিয়া বক্তৃতা দিয়েছিল- শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী তো দূরের কথা বিরোধী দলীয় নেতাও কখনও হবে না। আওয়ামী লীগ একশ বছরেও ক্ষমতায় যাবে না। আল্লাহ এ ধরনের গর্বভরা কথা পছন্দ করেন না। আর বাংলাদেশের মানুষ তো একেবারেই পছন্দ করে না। এজন্য খালেদা জিয়ার মুখের কথা তার বেলায়ই লেগে গেছে।
আন্দোলন নিয়ে বিএনপিকে হুঁশিয়ার করে তিনি বলেন, আপনারা আন্দোলন করেন, সংগ্রাম করেন, মিছিল করেন, মিটিং করেন কোনও আপত্তি নেই। কিন্তু কোনও মানুষকে যদি পুড়িয়ে মারা বা বোমা মারা বা গ্রেনেড মারা বা এই ধরনের অত্যাচার করতে চায়, তাহলে একটাকেও ছাড়বো না। এই কথা বলে দিতে চাই। এটা হলো বাস্তব কথা। আমাদের ওপর যে আঘাত দেওয়া হয়েছে, তা ভুলি নাই। সহ্য করেছি দেখে এটা মনে না করে, সহ্য করাটা আমাদের দুর্বলতা- দুর্বলতা না।
বাংলাদেশের জনগণ আওয়ামী লীগের সঙ্গে আছে দাবি করে দলটির সভাপতি বলেন, ওই খুনিদের (বিএনপি) সঙ্গে নাই। ওদের কি অধিকার আছে এই দেশের মানুষের কাছে দাঁড়ানোর? আর ভোট চাওয়ার বা রাজনীতি করার? তারপরও আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি। তারা শাস্তি পেয়েছে। এতিমের টাকা আত্মসাৎ করায় খালেদা জিয়া সাজাপ্রাপ্ত। অস্ত্র চোরকারবারী, গ্রেনেড হামলা এবং অর্থ পাচারকারী হিসাবে তারেক জিয়া সাজাপ্রাপ্ত। তাদের নেতারা হচ্ছে সাজাপ্রাপ্ত আসামি। এটা প্রমাণিত। এরা এই দেশে মানুষের কল্যাণে কী কাজ করবে?
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার নারীদের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। গৃহহীনদের ঘরসহ বিভিন্ন প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। আর বিএনপি ক্ষমতায় থাকতে তেমন কিছুই করেনি। ধর্ষণসহ নারীর বিরুদ্ধে অত্যাচার-নির্যাতন হয়েছে।
সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ আওয়ামী লীগ ও মহিলা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা। সম্মেলনে শোক প্রস্তাব উত্থাপন করেন মহিলা আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক রোজিনা রোজি।
এর আগে দুপুর সোয়া ২টায় কোরআন তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে শুরু হয় সম্মেলনের আনুষ্ঠানিকতা। ২টা ৫০ মিনিটে সম্মেলনের মঞ্চে আসেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতা শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানান মহিলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। জবাবে নেতাকর্মীদের হাত নেড়ে অভিবাদন জানান তিনি। পরে ফুল দিয়ে শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানানো হয়।
এদিকে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পেয়েছেন মেহের আফরোজ চুমকি এবং সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন শবনম জাহান শিলা।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মহিলা আওয়ামী লীগের ষষ্ঠ ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে এই দুই নেত্রীর নাম ঘোষণা করেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার নির্দেশক্রমে এ ঘোষণা দেওয়ার কথা জানান তিনি।