fbpx

ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ ও যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞায় পণ্য আমদানিতে বিরাট বাধা আসছে: প্রধানমন্ত্রী

Pinterest LinkedIn Tumblr +
Advertisement

ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ ও যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার কারণে পণ্য আমদানিতে বিরাট বাধা আসছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, আমরা কোথায় আমাদের প্রয়োজনীয় পণ্য সামগ্রী পাব সেই প্রাপ্তির ক্ষেত্রটাও সংকুচিত হয়ে গেছে। এই প্রভাবটা শুধু বাংলাদেশ না, এটা আমি মনে করি, আমেরিকা, ইউরোপ, ইংল্যান্ড থেকে শুরু করে সারা বিশ্বব্যাপী এর প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবং মানুষ কিন্তু কষ্ট ভোগ করছে। এটা উন্নত দেশগুলোর বিশেষভাবে বিবেচনা করা উচিত।

বৃহস্পতিবার (৭ জুলাই) সকালে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নবনির্মিত ৮ তলা ভবন উদ্বোধন এবং বঙ্গবন্ধু কূটনৈতিক উৎকর্ষ পদক প্রদান অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, আমেরিকার এটা বিবেচনা করা উচিত, তারা যে স্যাংশন দিচ্ছে তাতে তাদের দেশের লোকও যে কষ্ট পাচ্ছে। সে দিকেও তাদের দৃষ্টি দেওয়া উচিত বলে আমি মনে করি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সব সময় আমরা শান্তি চাই। জাতির পিতা আমাদের শিখিয়েছেন আমাদের পররাষ্ট্রনীতি সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব কারো সঙ্গে বৈরীতা নয় এবং সেই নীতিটা যথাযথভাবে আমি মেনে চলি, আমাদের রাষ্ট্র মেনে চলে। কারণ আমি সব সময় বিশ্বাস করি, আমার দেশের মানুষকে দারিদ্র্যমুক্ত করতে হবে। তাদের জীবনের মৌলিক চাহিদা অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা ও শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। তাদেরকে উন্নত জীবন দিতে হবে। বাংলাদেশ একটি ব-দ্বীপ, প্রতিনিয়ত প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করে চলতে হয়। জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতে সব সময় এই দেশ ঝুঁকিতে থাকে। কাজে এ দেশের মানুষগুলোকে একটু সুন্দরভাবে বাঁচার সুযোগ করে দেওয়া, তাদের জীবনটাকে অর্থবহ করে দেওয়া—এটাই আমাদের লক্ষ্য। সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।

আজকে আমরা প্রত্যেকটা বাড়িতে, একেবারে গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত, এমনকি আমাদের দ্বীপ অঞ্চলে সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে যেমন ব্রডব্যান্ড পৌঁছে দিচ্ছি, পাশাপাশি বিদ্যুৎও পৌঁছে দিয়ে আমরা শতভাগ বিদ্যুৎ দিতে সক্ষম হয়েছি। এছাড়া রাস্তা-ঘাট, পুল-ব্রিজ ব্যাপকভাবে নির্মাণ করে সেটা উন্নত করছি। ২৫ জুন আমরা স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধন করেছি যেটা দক্ষিণ অঞ্চলের ২১টা জেলার মানুষ আর্থ-সামাজিকভাবে নিজেদের জীবনকে উন্নত করতে সক্ষম হবে। ৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে ৯৮ সালে যমুনা নদীর ওপর বঙ্গবন্ধু সেতু নির্মাণ করে উত্তরবঙ্গ থেকে সম্পূর্ণ দুর্ভিক্ষ দূর করেছিলাম, মঙ্গা দূর করেছিলাম আর এবার দক্ষিণ অঞ্চল সংযুক্ত করার ফলে এ অঞ্চলের উন্নতি হবে। বাংলাদেশের মানুষ সবাই সুন্দরভাবে বাঁচতে পারবে সেই সুযোগটা আমরা সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছি, বলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আমরা যুদ্ধ চাই না, শান্তি চাই। আমাদের দুর্ভাগ্য, যখন সারা বিশ্ব করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে অর্থনৈতিকভাবে বিরাট ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে ঠিক সেই সময় রাশিয়া ও ইউক্রেনের যুদ্ধের ফলে সারা বিশ্বব্যাপী মানুষের অবস্থাটা আরও করুণ হয়ে যাচ্ছে। মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তার ওপর আমেরিকা স্যাংশন দেওয়ার ফলে আমাদের পণ্য প্রাপ্তিতে, যেগুলো আমরা আমদানি করি—সেখানে বিরাট বাধা আসছে। শুধু তাই না, পরিবহন খরচ বেড়ে গেছে এবং আমরা কোথায় আমাদের প্রয়োজনীয় পণ্য সামগ্রী পাব সেই প্রাপ্তির ক্ষেত্রটাও সংকুচিত হয়ে গেছে। এই প্রভাবটা শুধু বাংলাদেশ না, এটা আমি মনে করি, আমেরিকা, ইউরোপ, ইংল্যান্ড থেকে শুরু করে সারা বিশ্বব্যাপী এর প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবং মানুষ কিন্তু কষ্ট ভোগ করছে। এটা উন্নত দেশগুলোর বিশেষভাবে বিবেচনা করা উচিত। আমেরিকার এটা বিবেচনা করা উচিত, তারা যে স্যাংশন দিচ্ছে তাতে তাদের দেশের লোকও যে কষ্ট পাচ্ছে। সে দিকেও তাদের দৃষ্টি দেওয়া উচিত বলে আমি মনে করি।

এই স্যাংশন যাদের বিরুদ্ধে দিচ্ছেন তাদের আপনারা ক্ষতিগ্রস্ত করতে চাচ্ছেন কিন্তু কতটুকু তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে? তার থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত সাধারণ মানুষ হচ্ছে, সব দেশের। উন্নত দেশ, উন্নয়নশীল দেশ বা সকল দেশের মানুষই কিন্তু…যারা নিম্ন আয়ের দেশ, সব দেশই কিন্তু কষ্ট পাচ্ছে। কারণ করোনা মহামারি থেকে কেবল আমরা একটু উদ্ধার পাচ্ছিলাম তখনই এই যুদ্ধ আর স্যাংশন। যেটা সত্যিই আমাদের জন্য বিরাট একটা চ্যালেঞ্জ, বলেন তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, এই চ্যালেঞ্জটা মোকাবিলা করতে হবে। আমি মনে করি, স্যাংশন দিয়ে কখনো কোনো দেশ বা জাতিকে নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। সেটা নিশ্চয়ই এখন দেখতে পাচ্ছেন। তার প্রভাব নিজেদের ওপরে এসেও পড়ে। কাজে এই স্যাংশন তুলে দেওয়া এবং পণ্য পরিবহন আর যুদ্ধ যাদের করার করতে থাকেন কিন্তু পণ্য পরিবহন বা আমদানি-রপ্তানি যাতে সহজভাবে হয় আর সাধারণ মানুষ যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। খাদ্যটা মানুষের সব থেকে বড় চাহিদা। সেখানেই সমস্যায় পড়ে গেছে অনেক উন্নত দেশও। আমরা যে খবর পাই, আমাদেরও অনেক লোক বসবাস করে বিভিন্ন দেশে, প্রত্যেকের জীবনটা দুর্বিষহ হয়ে যাচ্ছে। আমার দেশে আমি চেষ্টা করছি, আমাদের মাটি-মানুষ আছে, আমরা উৎপাদন বাড়াবো। আমাদের খাদ্যটা যেন আমরা নিজেরাই উৎপাদন করে চলতে পারি সে ব্যবস্থাও করবো, সঙ্গে সঙ্গে আরও কাউকে সাহায্য করতে পারি সেটাও করবো। সেই উৎপাদন বাড়াতে গেলে আমাদের সার, ডিজেল, বিভিন্ন উপকরণ প্রয়োজন। সেটা আমরা পাচ্ছি না। কাজেই এভাবে মানুষকে কষ্ট দেওয়ার কী অর্থ থাকতে পারে আমি ঠিক জানি না। এখানে তো আমি বলবো একদিক থেকে বলতে গেলে এটাও তো মানবাধিকার লঙ্ঘন করার সামিল। মানুষের যে অধিকার আছে সে অধিকার থেকে মানুষকে বঞ্চিত করা ঠিক নয়। আমরা আশা করি, একটি দেশকে শাস্তি দিতে যেয়ে বিশ্বের মানুষকে শাস্তি দেওয়া; এখান থেকে সরে আসাটা বোধ হয় বাঞ্ছনীয়। সবাই সেটাই চাইবে, আমি এটা মনে করি।

তিনি আরও বলেন, আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি বাংলাদেশে একটি মানুষও ভূমিহীন-গৃহহীন থাকবে না। আমরা হিসাব করে প্রতিটি এলাকায় যারা হোমলেস আছে তাদের আমরা সরকারের পক্ষ থেকে বিনা পয়সায় ঘর তৈরি করে দিচ্ছি, পাশাপাশি তাদের জীবন-জীবিকার জন্য আর্থিক সহায়তা দিচ্ছি, ট্রেইনিং দিচ্ছি। আমাদের অনগ্রসর মানুষ যারা—ট্রান্স জেন্ডার পিপল বা আদার্স বা ভাসমান কিছু লোক আমাদের দেশে আছে, প্রত্যেকের জন্য আমি নিজের পয়সায় ঘর করে তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা এবং জীবন-জীবিকার ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। সম্প্রতি প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, আমাদের মাত্র ২২ হাজার ১৩৫ জন মানুষ এখন ভাসমান। এরা কেউ ভাসমান থাকবে না। আমি সরকারের পয়সা দিয়ে ঘর-বাড়ি করে তাদের পুনর্বাসন করবো।

আমি আশা করি, আমাদের উন্নত দেশগুলোও তৃণমূলে যে মানুষগুলো থাকে তাদের বা পরিবারগুলো, তাদের দিকে একটু দৃষ্টি দেওয়া দরকার। এখনো অনেক উন্নত দেশেও মানুষের ঘর নাই বা ভাড়া করে থাকার মতো সামর্থ নাই। হয়তো দেখা যাচ্ছে, তারা তাবু করে থাকছে। কেউ গাড়িতে কাটাচ্ছে। এ রকম বহু স্টোরি আমরা শুনি। সেটাও কিন্তু ব্যবস্থা নেওয়াটা খুব সহজ। এটা খুব বেশি কষ্টের না। আমাদেরও টাকা-পয়সা সীমিত কিন্তু আমরা তো করে যাচ্ছি মানুষের জন্য। ইচ্ছা থাকলে করা যায়, বলেন শেখ হাসিনা।

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা মানবিক কারণে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছি। কিন্তু ৩টা বছর পূর্ণ হয়ে গেছে। আমাদের জন্য আসলে এটা একটা বিরাট বোঝা। একেতো করোনাভাইরাস তার ওপর যুদ্ধ, এই পরিস্থিতিতে উন্নত দেশগুলো যেখানে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে হিমশিম খাচ্ছে সেখানে আমাদের সাড়ে ১৬ কোটি মানুষের ওপর আরেকটা বোঝা টানা যে কত কষ্টকর সেটা সবার উপলব্ধি করা উচিত। আমি মনে করি, আন্তজার্তিক সংস্থাগুলো এবং দেশগুলো আরেকটু সক্রিয় হয়ে রোহিঙ্গারা যাতে তাদের নিজের দেশে ফিরে যেতে পারে। তাদের ছেলে-মেয়েরা যেন তাদের দেশে মানুষ হতে পারে। তারা একটা ভালো পরিবেশে চলে যেতে পারে। এভাবে ক্যাম্পের জীবন যাপন যেন না করতে হয়। তাদেরও তো একটা মানবাধিকার আছে। কাজেই সে ব্যাপারে সবাই একটু সক্রিয় হবে সেটাই আমরা আশা করি।

Advertisement
Share.

Leave A Reply