“শরিয়ার ব্যাখ্যার ভিত্তিতে তৈরি করা আইনের অধীনে একজন নারীকে তাদের চুল ঢেকে (হিজাব বা মাথার স্কার্ফ দিয়ে) রাখতে হয় এবং লম্বা ও ঢিলেঢালা পোশাক পরতে হয়। আর এটার বাস্তবায়নের দায়িত্ব বর্তায় নৈতিকতা পুলিশের ওপর।”
মাহশা আমিনির বাবা আমজাদ আমিনি বলেছেন, ‘চিকিৎসকরা মাহশার মৃত্যুর পর তাকে আর দেখতে দেয়নি। ইরানের কর্মকর্তারা দাবি করেছেন, মাহশা হার্ট অ্যাটাক করেন এরপর কোমায় মারা যান। কিন্তু মাহশার পরিবার বলছে, মাহশার আগে কোনো হার্ট অ্যাটাক হয়নি, তার স্বাস্থ্যও ভালো ছিল।’ খবর রয়টার্স…
হিজাব ঠিকঠাক না পরার অভিযোগে ২২ বছর বয়সী মাহশা আমিনির পুলিশি হেফাজতে মৃত্যু ঘিরে ইরানে চলছে বিক্ষোভ। দেশটিতে নারীদের এই বিক্ষোভে নিরাপত্তা বাহিনীর তাণ্ডবে এখন পর্যন্ত ৩১ জন নিহত হয়েছেন। এ তথ্য জানিয়েছে নরওয়ে ভিত্তিক এক এনজিও।
গতকাল বৃহস্পতিবার (২২ সেপ্টম্বর) বিক্ষোভকারীদের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি।
নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘের ৭৭তম সাধারণ অধিবেশনের ফাঁকে এ বিষয়ে এক সংবাদ সম্মেলন করেন রাইসি। তিনি জানান, বিশৃঙ্খল কর্মকাণ্ড মেনে নেওয়া হবে না। এছাড়া মাহশা আমিনির মৃত্যু ঘিরে তিনি তদন্তেরও নির্দেশ দিয়েছেন।
ইরানের প্রেসিডেন্ট বলেছেন, ইরানে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা আছে, কিন্তু বিশৃঙ্খল কর্মকাণ্ড অগ্রহণযোগ্য। ২০১৯ সালের পর দেশটিতে তুমুল বিক্ষোভ চলছে।
রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এবারের বিক্ষোভে দেশটির নারীরা প্রথম সারিতে আছেন। তারা হিজাব নাড়ছেন এবং তা পুড়িয়ে ফেলছেন। দেশটির ধর্মীয় নেতাদের চ্যালেঞ্জ ছুড়ে অনেকে প্রকাশ্যে নিজের চুল কাটছেন।
এদিকে, ইরানের মানবাধিকার সংস্থার (আইএইচআর) পরিচালক মাহমুদ আমিরি মোঘাদ্দাম এক বিবৃতিতে বলেন, ইরানের জনগণ তাদের মৌলিক অধিকার ও মানবিক মর্যাদা আদায়ে রাস্তায় নেমেছে। কিন্তু ইরান সরকার বুলেট দিয়ে তাদের শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ দমন করছে।
গত ১৩ সেপ্টেম্বর তেহরানের নৈতিকতা পুলিশ যখন মাহশাকে গ্রেপ্তার করেছিল তখন আমিনির মাথার স্কার্ফের নিচে কিছু চুল দৃশ্যমান ছিল। পরে তাকে আটক করা হলে সেখান থেকে তাকে হাসপাতালে নেয়া হলে ৩ দিন চিকিৎসাধীন অবস্থায় থাকার পর তিনি মারা যান।
এরপর টানা আট দিনের মতো চলছে দেশটিতে বিক্ষোভ। বিক্ষোভ দমাতে দেশটির কর্তৃপক্ষ সামাজিম যোগাযোগমাধ্যম হোয়াটসঅ্যাপ-ইন্সটাগ্রাম সেবাও বন্ধ করে দিয়েছে। এছাড়া ইরানজুড়ে উল্লেখযোগ্য ইন্টারনেট পরিষেবাও বিপর্যয় ঘটেছে।
ইরানের ৩০ টির বেশি শহরে এবং অন্যান্য নগর কেন্দ্রেও বিক্ষোভ চলছে।