fbpx

ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ মোকাবেলায় উপকূলীয় জেলাসমূহে প্রস্তুতি

Pinterest LinkedIn Tumblr +
Advertisement

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ উপকূলের দিকে ধেয়ে আসছে। কক্সবাজার সমুদ্র বন্দরকে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরকে ৮ নম্বর মহাবিপদ সংকেত এবং পায়রা ও মোংলা সমুদ্র বন্দরকে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখানো হয়েছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, উপকূলীয় জেলা কক্সবাজার এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে। উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ৮ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।

ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ মোকাবেলায় উপকূলীয় জেলাসমূহের প্রশাসনের ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। বাসসের জেলা সংবাদদাতারা জানান –

কক্সবাজার: জেলায় ৫৭৬টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। লোকজনকে আশ্রয় কেন্দ্রে আসার জন্য প্রচারণা চালানো হচ্ছে। স্বেচ্ছাসেবকরা লোকজনকে আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে আসার জন্য দুর্যোগ উপেক্ষা করেও কাজ করে যাচ্ছে। ঘুর্ণিঝড়ের প্রভাবে সকাল থেকে জেলায় গুড়িগুড়ি বৃষ্টিপাত হচ্ছে। সকাল থেকে কক্সবাজার সদরের পৌর প্রিপারেটরি উচ্চ বিদ্যালয়ে শহরের নিচু এলাকা সমিতি পাড়ার লোকজন আশ্রয় কেন্দ্রে চলে এসেছে। জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গির আলম বলেন, সকাল থেকে উপকূলীয় এলাকার লোকজনকে আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে আসার কাজ শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে মহেশখালীর মাতারবাড়ি, ধলঘাটা, টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ এবং সেন্টমার্টিনে লোকজন আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছে। বিভিন্ন কেন্দ্রে আশ্রয় নেয়া লোকজনকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে রান্না করা এবং শুকনো খাবার দেয়া হচ্ছে। তিনি জানান- কক্সবাজার জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে। নিয়ন্ত্রণ কক্ষের মোবাইল নম্বর- ০১৮৭২৬১৫১৩২।

এছাড়াও সব উপজেলায় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ চালু করা হয়েছে। জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান জানান, আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে যারা আশ্রয় গ্রহণ করবেন তাদের খাদ্য সামগ্রী দেয়া হবে। এসব আশ্রয় কেন্দ্রে ৫ লাখের বেশী লোক আশ্রয় নিতে পারবে। তিনি জানান- জেলার উপকূলীয় এলাকায় রেড ক্রিসেন্টের ৮ হাজার ৬০০ স্বেচ্ছাসেবক ইতিমধ্যে কাজ শুরু করেছে। তারা লোকজনকে আশ্রয় কেন্দ্রে আসার জন্য প্রচারণা চালাচ্ছে।

প্রশাসনের পক্ষ থেকে যানবাহন দিয়েও লোকজনকে সহযেযাগিতা করা হচ্ছে। তিনি জানান- ঘুর্ণিঝড়ের প্রভাবে অতি বৃষ্টিতে পাহাড় ধ্বসের আশংকাও রয়েছে। তাই ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা চিহ্নিত করে সেখানে লোকজনকে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে। জেলা প্রশাসক জানান, সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় মোখা মোকাবেলায় কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। জেলা ও সব উপজেলায় কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। জরুরী ত্রাণ হিসেবে ১০ লাখ ৩০ হাজার নগদ টাকা, ৪৪০ টন চাল, ৭ টন শুকনো খাবার, পানি বিশুদ্ধকরণ বড়ি ও ১৯৪ বান্ডিল ঢেউ টিন মজুত রাখা হয়েছে।

চট্টগ্রাম: জেলা প্রশাসক আবুল বাশার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান জানান, চট্টগ্রাম শহর ও বিভিন্ন উপজেলা মিলিয়ে প্রস্তুত করা হয়েছে ১ হাজার ৩০টি আশ্রয়কেন্দ্র। এসব আশ্রয়কেন্দ্রের ধারণক্ষমতা ৫ লাখ ১ হাজার ১১০ জন। জেলায় ৮ হাজার ৮৮০ জন সিপিপি স্বেচ্ছাসেবক ও রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির ৮ হাজার স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তত রাখা হয়েছে। উপজেলা ও নগরীর উপকূলবর্তী ওয়ার্ড থেকে এবং পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারী লোকজনকে সরিয়ে নিতে এলাকায় মাইকিং করে লোকজনকে নিকটবর্তী আশ্রয়কেন্দ্রে চলে যেতে বলা হচ্ছে। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন মেয়রের একান্ত সচিব আবুল হাশেম বাসস’কে জানান, ‘পর্যাপ্ত পরিমাণ খাবার ও পানিসহ আমাদের ৯০টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তÍত। আরবান ১ হাজার ৫০০ ও রেডক্রিসেন্টের ২২০ জন স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তÍত রয়েছে। ঘূর্ণিঝড় মোখা’য় ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কায় চট্টগ্রাম বন্দরের সব ধরনের অপারেশনাল কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। বন্দর কর্তৃপক্ষ তাদের নিজস্ব অ্যালার্ট-৪ জারি করায় ইয়ার্ড ও জেটির সব কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বন্দর ও মাদার ভেসেলের নিরাপত্তার স্বার্থে জেটিতে অবস্থানরত ২০টি ও বহির্নোঙ্গরের ৬০টি জাহাজকে গভীর সাগরে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ নৌবাহিনীর চট্টগ্রাম অঞ্চল তাদের পতেঙ্গা নৌঘাঁটিসহ সব স্থাপনা ও সরঞ্জামের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপশি ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী জরুরি অভিযানের জন্য ২টি হেলিকপ্টার ও ছোট-বড় ২১ টি নৌযান প্রস্তÍত রেখেছে। চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দরে আজ সকাল থেকে আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ সকল ফ্লাইট ওঠানামা বন্ধ রয়েছে।  জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ থেকেও সর্বোচ্চ প্রস্তÍুতি নেয়া হয়েছে। সিভিল সার্জন ডা. ইলিয়াছ চৌধুরী জানান, আমরা  ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী তৎপরতা দ্রুত শুরু করার জন্য ২৮৪টি মেডিক্যাল টিম গঠন করেছি। এর মধ্যে চট্টগ্রাম জেলার ১৪টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অধীনে ৫টি করে মোট ৭০টি, ২০০ ইউনিয়নে জন্য একটি করে, সিভিল সার্জন কার্যালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন ৯ আরবান ডিসপেনসারিতে ৯টি ও চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ৫টি রয়েছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আকমল আলী ঘাট, রাসমনি ঘাট ও পতেঙ্গার উপকূলবর্তী ঝুঁকিপূর্ণ প্রায় ৪-৫ হাজার জেলে পরিবারকে নিরাপদে সরিয়ে নিতে শুরু করেছে। চট্টগ্রামে ১ হাজার ৩টি আশ্রয়কেন্দ্রসহ ২১০০ প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং প্রয়োজন অনুসারে অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সাইক্লোন শেল্টার হিসেবে ব্যবহার করা হবে। আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থানকারী লোকজনের জন্য পর্যাপ্ত শুকনো খাদ্য, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট ও ওরাল স্যালাইন মজুদ রেখেছে জেলা প্রশাসন। চট্টগ্রামের ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স তাদের ২৫ ফায়ার স্টেশনের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছুটি বাতিল করেছে। কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ২৫ জনের একটি স্পেশাল টিম গঠন করা হয়েছে। শনিবার সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) এস এম শফিউল্লাহ বলেন, কেউ সমস্যায় পড়লে থানা অথবা জেলা পুলিশ কর্মকর্তাদের ফোন দেবেন। না হয় জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ কল দিলেও হবে। আমাদের টিম উদ্ধার তৎপরতা, জনসাধারণের চিকিৎসা সেবাসহ যেকোনো জরুরি সেবা দিতে তৎপর থাকবে। জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে একটি জরুরি সেবা কেন্দ্র খোলা হয়েছে। জেলার আওতাধীন লোকজনকে জরুরি সেবার জন্য ০১৩২০-১০৭৪০২, ০১৩২০-১০৮৩৯৮, ০১৩২০-১০৮৩৯৯ ও ০২-৪১৩৫৫৫৪৯ এই চারটি নম্বরে যোগাযোগ করতে নির্দেশনা দেয়া হয়। এসব নম্বর ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকবে। এদিকে ২৪ ঘন্টা নিয়ন্ত্রণ কক্ষ চালু করেছে সিএমপি। ঘূর্ণিঝড় সংক্রান্ত নগরবাসীর  ফোন রিসিভ করবে এবং সেই অনুযায়ী তাৎক্ষণিক সমাধানের ব্যবস্থা করবে। নিয়ন্ত্রণ কক্ষের নম্বর সমূহ- ০১৬৭৬১২৩৪৫৬, ০১৩২০০৫৭৯৮৮, ৬৩০৩৫২, ৬৩০৩৭৫ ও ৬৩৯০২২।

ফেনী: জেলার সোনাগাজী উপকূলীয় অঞ্চলে ৪৩টি আশ্রয়ণকেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে। এতে ১৬ হাজার মানুষ আশ্রয় নিতে পারবে। জেলা প্রশাসক আবু সেলিম মাহমুদ-উল হাসান জানান, উপকূলীয় মানুষের স্বাস্থ্যসেবায় ১৪টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। প্রস্তুত রাখা হয়েছে রেডক্রিসেন্ট, সিপিপিসহ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যদের। উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের তথ্যমতে, উপকূলীয় এলাকায় ভেঁড়া আছে ৪ হাজার ৮৬১টি, ছাগল ২ হাজার ১৩০টি, গরু ৬ হাজার ৩১০টি, মহিষ ২ হাজার ৫৭২টি, হাঁস ২৩ হাজারটি এবং মুরগী আছে ১ লাখ ৩০ হাজার। সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার পূর্বেই উন্মুক্ত চর হতে প্রাণিগুলো খামারির মাধ্যমে নিরাপদ স্থানে নিয়ে আসার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। উপজেলা মৎস্য দপ্তর সূত্র জানায়, তালিকাভুক্ত আড়াইশো জেলে রয়েছে। ছোটবড় শতাধিক মাছ ধরার নৌকা রয়েছে। তাদের নিরাপদে থাকতে বলা হয়েছে। জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, ইতোমধ্যে দুর্যোগে সম্ভাব্য ক্ষতি মোকাবেলায় চাল, নগদ টাকা, শুকনো খাবার বরাদ্দ দিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর।

নোয়াখালী: জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে , ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে সভা করে ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। জেলায় মোট ৪৬৩টি আশ্রয়কেন্দ্র ও তিনটি মুজিব কিল্লা প্রস্তুত রাখা হয়েছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রস্তুত রয়েছেন প্রায় সাড়ে ৭ হাজারের মত স্বেচ্ছাসেবী। স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে গঠন করা হয়েছে ১১১টি মেডিক্যাল টিম। এছাড়া, রেডক্রিসেন্ট ও সিপিবির ৫ শতাধিক প্রশিক্ষিত স্বেচ্ছাসেবীও দুর্যোগকালীন সময়ে সেবা দেয়ার জন্য প্রস্তুত রয়েছেন।জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। হাতিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. কাউসার খসরু জানান- মোখা মোকবেলায় উপজেলা প্রশাসন থেকে সব ধরণের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। সিপিপি’র উপ-পরিচালক বদিউজ্জামান জানান- আমাদের সব ভলন্টিয়ার মাঠে প্রস্তুত রয়েছে। সকাল থেকে মাইকিং করছে স্বেচ্ছাসেবীরা।

লক্ষ্মীপুর: জেলায় ৬৪টি মেডিকেল টিম ও ১৮৫টি সাইক্লোন শেল্টার প্রস্তুত রাখা হচ্ছে। দুর্যোগকালীন ত্রাণ তহবিলে ৮ লাখ ১২ হাজার টাকা ও ৪২০ টন চাল রয়েছে। এছাড়া জরুরী দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রণ কক্ষ ও হেল্পলাইন নাম্বার চালু করা হবে। সকল সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দূর্যোগকালীন কর্মস্থলে থাকার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। দূর্যোগ থেকে মানুষ ও গৃহপালিত প্রাণী রক্ষায় ফায়ার সার্ভিস, জনপ্রতিনিধি ও রেড ক্রিসেন্টসহ স্বেচ্ছাসেবীরা কাজ করবে। দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় এসব তথ্য জানান- জেলা প্রশাসক মো. আনোয়ার হোছাইন আকন্দ।

চাঁদপুর: জেলার নদী উপকূলীয় এলাকায় সর্বসাধারণকে সতর্ক করতে সচেতনতামূলক মাইকিং করা হচ্ছে। তিন নদীর মোহনা, বেদে পল্লী, মাছঘাট, জেলে পল্লী, লঞ্চঘাট ও যাত্রীবাহী লঞ্চে মাইকিং করেন কোস্টগার্ড চাঁদপুর স্টেশনের টহল বাহিনীর সদস্যরা। বিকেলে ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্স চাঁদপুর উত্তর স্টেশনের পক্ষ থেকে শহরের বিভিন্ন পাড়া মহল্লায় গাড়ী দিয়ে মাইকিং করা হয়। কোস্টগার্ড চাঁদপুর স্টেশন থেকে জানানো হয়, কোস্ট গার্ড ঢাকা জোন কর্তৃক জরুরি পরিস্থিতি মোকাবেলা করার লক্ষ্যে সার্বক্ষণিক সমন্বয়সাধনের জন্য জরুরি : ০১৭৬৯-৪৪০৩৩৩ নম্বরে ২৪ ঘন্টা সেবা প্রদান করা হবে।

বরিশাল : বিআিইডব্লিউটিএ-এর সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আজ শনিবার সকাল থেকে বরিশালের অভ্যন্তরীন রুটে সব ধরনের লঞ্চ চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। সেই সাথে বরিশাল নদী বন্দর এলাকার আশপাশ থেকে বিভিন্ন রুটে যাতায়াতকারী স্পিড বোটগুলোও চলাচল বন্ধ করা হয়েছে। অপরদিকে, বরিশাল নদী বন্দর এলাকায় সিপিপি বরিশাল আঞ্চলিক অফিসের বিভিন্ন পদের সদস্যরা সতর্ক সংকেতমূলক প্রচার-প্রচারণা করে যাচ্ছে। বরিশাল বিভাগের ৬ জেলার বিভিন্ন স্থানে ৩২ হাজার ৫২০ জন সিপিপি’র বিভিন্ন পদের কর্মকর্তা-কর্মচারীকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। জেলায় রেড-ক্রিসেন্ট বিভাগের ৩২০ জন স্টাফের মধ্যে ২৫০ জন মাঠে দায়িত্ব পালন করার কাজে নিয়োজিত রয়েছে।
ভোলা: জেলা প্রশাসক মো. তৌফিক-ই-লাহী চৌধুরী জানান, আমাদের সর্বাত্বক প্রস্তুতি রয়েছে। শনিবার দুপুর থেকে সদর উপজেলা, দৌলতখান, চরফ্যাশনসহ বিভিন্ন এলাকার চরাঞ্চলের বাসিন্দারা গবাদী পশুসহ কেন্দ্রগুলোতে অবস্থান নিচ্ছে। জেলার মোট ৭৪৬ টি আশ্রয় কেন্দ্রে সাড়ে ৫ লাখ মানুষ ও ১০ লাখ গবাদী পশু অবস্থান করতে পারবে। জেলা ত্রাণ ও পুর্ণবাসন কর্মকর্তা এস এম দেলোয়ার হোসেন বলেন, সদর উপজেলার মাঝের চরে আমাদের দুইটি মুজিব কিল্লায় মানুষজন গাদী পশু নিয়ে আসতে শুরু করেছে।

রাঙ্গামাটি: শহরে বিভিন্ন পয়েন্টে   ২০ টি আশ্রয় কেন্দ্র সম্পূর্ণভাবে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান) জানান, পাহাড়ের ঢালে ও ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে বসবাসকারী সকল লোকজনকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সতর্কতা অবলম্বন করতে অনুরোধ জানিয়ে এলাকায় এলাকায় মাইকিং করা হয়েছে।

বাগেরহাট: মোংলা সমুদ্র বন্দর কর্তৃপক্ষের হারবার মাস্টার ক্যাপ্টেন মোহাম্মাদ শাহীন মজিদ জানান বন্দরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সতর্ক থাকার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।  বন্দর এলাকায় এই মুহুর্তে ৭টি বিদেশী জাহাজ এবং ১১টি দেশী জাহাজ রয়েছে। এসব জাহাজ ও জাহাজের পাশে অবস্থান করা পণ্য নিতে আসা ছোট লাইটার, বার্জ ও কোস্টারগুলোকেও নিরপদ স্থানে সরে যেতে বলা হয়েছে। মোংলা বন্দর জেটিতে নোঙ্গর করেছে নৌ বাহিনী ও কোস্টগার্ডের চারটি জাহাজ। মোংলা বন্দরের সাত ও আট নম্বর জেটিতে শুক্রবার রাতে জাহাজ চারটি নোঙ্গর করে। জাহাজগুলো হচ্ছে, নৌ বাহিনীর ‘বি এন এস বঙ্গবন্ধু’ ও ‘বি এন এস স্বাধীনতা’ এবং কোস্টগার্ডের ‘তাজউদ্দিন’ ও ‘সৈয়দ নজরুল’ জাহাজ।

বরগুনা: জেলায় প্রায় ১০ হাজার স্বেচ্ছাসেবক ও ৬৪২ আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তÍুত রেখেছে প্রশাসন। জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন করেছে বরগুনা জেলা প্রশাসন। সাগরে থাকা জেলেরা ট্রলার ও নৌকা নিয়ে উপকূলের নিরাপদ স্থানগুলোতে আশ্রয় নিয়েছে। জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী বাসস’কে জানান, অধিকাংশ জেলেই তীরে ফিরে এসেছে। সমুদ্রে মাছ শিকাররত জেলেদের ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস জানিয়ে দেয়া হয়েছিলো। জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান জানিয়েছেন, জেলায় ২৯৪ টন খাদ্যশস্য মজুদ রাখা হয়েছে। দুর্যোগ পরবর্তী জরুরি ত্রাণ বাবদ ৮ লাখ ৪০ হাজার টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। ১৪২ বান্ডিল ঢেউটিন ও গৃহনির্মাণ ব্যয় বাবদ ৪ লাখ ২৬ হাজার টাকা, ২ হাজার কম্বল ও ২ হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার মজুদ রয়েছে। ঘূর্ণিঝড় মোখা মোকাবেলায় বরগুনায় মোট ৬৪২টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে মোট ২ লাখ ৬৯ হাজার ৫১০ জন আশ্রয় নিতে পারবেন।

সূত্র: বাসস

Advertisement
Share.

Leave A Reply