fbpx

ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং: সারাদেশে গাছচাপা ও নৌকাডুবিতে ৭ জনের মৃত্যু

Pinterest LinkedIn Tumblr +
Advertisement

শক্তি হারিয়ে স্থল নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং। তবে প্রাণ কেড়ে নিয়েছে পাঁচ নারী ও দুই শিশুসহ ৯ জনের। এদের মধ্যে গাছ চাপায় ৭ জন ও নৌকায় ডুবে ২ জন মারা গেছেন। এখন পর্যন্ত এ ঝড়ের সার্বিক ক্ষয়ক্ষতির চিত্র পাওয়া যায়নি।

সোমবার সন্ধ্যা ৬টায় ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রভাগ ও মূল কেন্দ্র রাত ৯টায় উপকূলে আঘাত হানে। তবে দুপুর থেকেই এর আভাস পাওয়া যাচ্ছিল। দেশের অধিকাংশ অঞ্চলে দমকা হাওয়া বইছিল। এসময় প্রথম মৃত্যুর ঘবর পাওয়া যায় নড়াইলের লোহাগড়ায়। উপজেলা পরিষদ চত্বরে গাছের ডাল পড়ে মারা যান মর্জিনা বেগম (৪০) নামে এক নারী। তার বাড়ি বাগেরহাট সদর উপজেলার অর্জনবাহার গ্রামে।

স্থানীয় লোকজন ও পুলিশ জানায়, মর্জিনা তার ছেলেকে নিয়ে লোহাগড়া পৌর এলাকার রাজপুর গ্রামের আবদুল গফ্ফারের বাড়িতে ভাড়া থেকে বিভিন্ন বাড়িতে গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করতেন। দুপুর ১২টার দিকে উপজেলা পরিষদ চত্বর দিয়ে যাওয়ার সময় পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের সামনে পৌঁছালে একটি মেহগনি গাছের ডাল ভেঙে মাথায় পড়লে তিনি গুরুতর আহত হন। লোহাগড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

অন্যদিকে সোমবার রাত নয়টার দিকে ভোলায় ঘূর্ণিঝড়ের দমকা হাওয়ায় গাছের চাপায় প্রাণ যায় বিবি খাদিজা (৬৮) নামে এক নারীর। এছাড়া জেলার চরফ্যাশন উপজেলার শশীভূষণ থানা এলাকায় ঘূর্ণিঝড়ের সময় মোটরসাইকেলে করে দুজন যাওয়ার সময় গাছের ডাল পড়ে ঘটনাস্থলেই একজন মারা যান। অপরজন আহত হন। নিহত ব্যক্তির নাম মো. মাইনুদ্দিন (৪৫)। তিনি পেশায় স্বর্ণ ব্যবসায়ী, বাড়ি চরফ্যাশনের হাজারিগঞ্জ এলাকায়। ভোলার পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।

বরগুনার সদর উপজেলার সোনাখালী এলাকায় একটি ঘরের চালে গাছ পড়লে ওই ঘরে থাকা আমেনা খাতুন নামের এক নারী মারা যান। সোনাখালী এলাকার সমাজকর্মী এনামুল হক ওরফে শাহীন বলেন, ঘূর্ণিঝড়ে নিহত আমেনা খাতুনের বয়স ১০০ বছরের বেশি। রাত আটটার দিতে ঘরের ভেতর খাবার খাচ্ছিলেন তিনি। আচমকা ঝড়ের সময় একটি গাছ তার ঘরের ওপর পড়ে। ঘটনাস্থলেই গাছ চাপায় মারা যান তিনি।

বরগুনার জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান বলেন, মঙ্গলবার সকালে জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে ওই নারীর পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে।

তবে সিত্রাং চলাকালে সবচেয়ে বেশি প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলায়। সোমবার রাত ১১টার দিকে উপজেলার হেসাখাল ইউনিয়নের হেসাখাল পশ্চিমপাড়ায় ঘরের ওপর গাছ উপড়ে পড়ে সন্তানসহ স্বামী-স্ত্রীর মৃত্যু হয়েছে। নিহত ব্যক্তিরা হলেন- হেসাখাল পশ্চিমপাড়া গ্রামের নিজাম উদ্দিন, তার স্ত্রী শারমিন আক্তার এবং তাদের চার বছরের সন্তান নুসরাত আক্তার।

হেসাখাল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইকবাল বাহার বলেন, ঘটনায় সময় তিনজনই ঘুমিয়েছিলেন। তিনজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে জানিয়ে নাঙ্গলকোট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফারুক হোসেন বলেন, ঘরের ওপর পড়া গাছটি সরানোর চেষ্টা চলছে। সেখানে আরও কেউ চাপা পড়েছে কি না, তা-ও দেখা হচ্ছে।

ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সিরাজগঞ্জে নৌকাডুবিতে মা ও ছেলের মৃত্যু হয়েছে। সোমবার রাত নয়টার দিকে জেলা সদরের সয়দা ইউনিয়নের মোহনপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

জানা গেছে, দুই ছেলেসহ এক গৃহবধূ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে নৌকাযোগে বাড়িতে ফিরছিলেন। পথে ঝড়ের কবলে পড়ে নৌকাডুবিতে ঘটনাস্থলে এক ছেলের মৃত্যু হয়। এ সময় অপর ছেলে ও তার মাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিত্সক সেই মাকেও মৃত ঘোষণা করেন। নিহত দুজন হলেন মোহনপুর গ্রামের খোকন হোসেনের স্ত্রী ও শিশুসন্তান। তবে তাৎক্ষণিকভাবে তাদের নাম জানা যায়নি।

এদিকে সময়ের সঙ্গে শক্তি হারিয়েছে সিত্রাং। কমানো হয়েছে বিপৎসংকেত। দেশের সমুদ্র বন্দরগুলোকে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। তবে ঝড়ের প্রভাবে মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত উপকূলসহ দেশের বেশির ভাগ এলাকাজুড়ে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টি হতে পারে।

Advertisement
Share.

Leave A Reply