৩০শে নভেম্বরের মধ্যে ঢাকা, চট্টগ্রাম এবং ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে সারাদেশে কেবল গ্রাহকদের কিনতে হবে সেট টপ বক্স এবং টেলিভিশনের সঙ্গে লাগাতে হবে ডিজিটাল এই যন্ত্রটি। বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে সেট টপ বক্সের আওতায় না আসলে গ্রাহকরা টিভি দেখতে সমস্যায় পড়বেন বলে এরইমধ্যে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।
সেট টপ বক্স আসলে কী? জানতে চাইলে সম্প্রচার ও তথ্যপ্রযু্ক্তি বিশেষজ্ঞ সালাউদ্দিন সেলিম বিবিএস বাংলাকে বলেন, ‘বর্তমানে ডিশ লাইন দিয়ে যারা টেলিভিশন দেখেন, সেটা আসলে এনালগ। সেই সিস্টেমটাকে ডিজিটাল করতেই সরকার সেট টপ বক্স সংযোগের নির্দেশনা দিয়েছেন। এনালগ টিভিতে যেমন ৮০টির বেশি চ্যানেল দেখা যায়না এবং ৪০ এর পরের চ্যানেলগুলো ক্লিয়ার পাওয়া যায় না। কিন্তু সেট টপ বক্সে ২৫০টিরও বেশি চ্যানেল দেখা যাবে এবং শেষ চ্যানেলটি পর্যন্ত ক্লিয়ার ও ঝকঝকে দেখা যাবে।’
এটি ছাড়া কি টিভি দেখা একেবারেই অসম্ভব? এই প্রশ্নের জবাবে সালাউদ্দিন সেলিম বলেন, ‘সেট টপ বক্স ছাড়া টিভি দেখা যাবে না এমন না, তবে বিশ্বের সাথে তাল মিলাতে গিয়ে বাংলাদেশের প্রতিটি চ্যানেল যেমন এইচডি প্রিন্টে সম্প্রচার শুরু করেছে, তাতে এনালগ সিস্টেমে থাকলে সেই এইচডি কোয়ালিটি দর্শক উপভোগ করতে পারবেনা। আগে যেমন টিভিতেই রিসিভার ছিল, এখন সেট টপ বক্সটি রিসিভার হিসেবে কাজ করবে। সেখান থেকে পছন্দ অনুযায়ী চ্যানেলের প্যাকেজ গ্রাহক পছন্দ করে নিতে পারবেন।’
কেবল অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ কোয়াব এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এস এম আনোয়ার পারভেজ বলেন, ‘এতো কম সময়ের মধ্যে প্রতিটি গ্রাহকদের দোরগোরায় সেট টপ বক্স পৌঁছে দেওয়া, বিরাট চ্যালেঞ্জিং। গত চার পাঁচ বছরের মধ্যে আমরা সর্বোচ্চ দুই থেকে তিন লাখ গ্রাহককে ডিজিটাল সিস্টেমের আওতায় আনতে পেরেছি। ঢাকা, চট্টগ্রাম দুই শহরে আরও যে ৩০ থেকে ৩৫ লাখ গ্রাহক আছে, তাদেরকে এই মাসের মধ্যে সেট টপ বক্সের আওতায় আনা প্রায় অসম্ভব। কারণ, চায়না থেকে আমদানি করা লাগবে এই যন্ত্রগুলো। এতো বক্স আনতে আমাদের যে পরিমাণ টাকা প্রয়োজন, সেই অর্থও আমাদের কাছে নেই। আমরা সরকারের কাছে আবেদন করেছি যেনো আমাদের স্বল্প সুদে ঋণের ব্যবস্থা করে দেয় এবং শুল্কমুক্তভাবে যেনো বক্সগুলি দেশে আনতে পারি, সেই সুযোগও করে দেয়। বক্সগুলি একবার আমাদের হাতে আসলে সেগুলো গ্রাহক পর্যায়ে পৌঁছাতে সর্বোচ্চ এক থেকে দেড় বছর লাগবে। যেখানে ভারতের লেগেছে প্রায় ১২ বছর।
এবার জেনে নেওয়া যাক সেট টপ বক্স লাগালে কী কী সুবিধা পাবেন একজন গ্রাহক:
১. এইচডি (হাই ডেফিনিশন) কোয়ালিটির নিখুঁত, ঝকঝকে ছবি পাওয়া যাবে।
২. বিদেশী চ্যানেলে ক্লিন ফিড বা বিজ্ঞাপন ছাড়া অনুষ্ঠান দেখা যাবে।
৩. এনালগ ব্যবস্থায় ১০০ চ্যানেল দেখা গেলেও ডিজিটাল সেট টপ বক্সে দেখা যাবে সর্বোচ্চ ১ হাজার চ্যানেল।
৪. গ্রাহক চাইলে ১০০, ১৫০ বা ২৫০ চ্যানেলের আলাদা প্যাকেজ নিতে পারবেন।
৫. প্রতিটি প্যাকেজের জন্য নির্ধারিত বিলের বাইরে কোন চার্জ দিতে হবে না।
একটি বাসায় একাধিক টিভি থাকলে প্রতিটি টিভির জন্য লাগবে আলাদা আলাদা সেট টপ বক্স ও কেবল সংযোগ। একটি কেবল লাইন বা একটি সেট টপ বক্স দিয়ে একের বেশি টিভি চালানো সম্ভব হবে না। ফলে কোন এলাকায় কতজন কেবল নেটওয়ার্ক ব্যবহার করছেন, তার প্রকৃত সংখ্যাটি জানতে পারবে কেবল অপারেটররা। তাতে কেবল অপারেটরদের কাছ থেকে সরকার আরও বেশি পরিমাণে রাজস্ব আদায় করতে পারবে বলে মনে করছে কোয়াব।