খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেছেন, বর্তমানে দেশে এযাবৎকালের সর্বোচ্চ পরিমাণ চালের মজুত আছে। তারপরও খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ও বাজার নিয়ন্ত্রণের জন্য চাল আমদানি বাড়াতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বৈরি আবহাওয়ার কারণে দেশে আমন আবাদ কিছুটা ব্যাহত হতে পারে। শুধু দেশে নয়, সারা বিশ্বেই খাদ্য উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
সারা দেশে ওএমএস ও খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি এবং টিসিবির কার্ডধারী ব্যক্তিদের মধ্যে চাল ও আটা বিতরণ উপলক্ষে আজ মঙ্গলবার দুপুরে নওগাঁ সার্কিট হাউস মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
আরও দুই দিন চাল সংগ্রহ অভিযান চলবে জানিয়ে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, চলতি বোরো সংগ্রহ অভিযানে গতকাল সোমবার পর্যন্ত ১৯ লাখ ৫০ হাজার ৫৩১ মেট্রিক টন চাল সংগৃহীত হয়েছে। চালের এই মজুত এযাবৎকালের মধ্যে সর্বোচ্চ। সংগ্রহ অভিযান আরও দুই দিন (আজ ও কাল বুধবার) চলবে। দুই দিনে লক্ষ্যমাত্রার বাকি ৫০ হাজার মেট্রিক টন চাল সংগ্রহ হয়ে যাবে। বাজারে কৃষকেরা এবার ধানের দাম ভালো পাওয়ায় ধান সংগ্রহ লক্ষ্যমাত্রার প্রায় অর্ধেক পূরণ হয়েছে।
সরকারিভাবে ধান সংগ্রহের মূল লক্ষ্য হচ্ছে কৃষকেরা যেন বাজারে ধানের ভালো দাম পান। সেই লক্ষ্যও পূর্ণ হয়েছে।
খাদ্য মজুত প্রসঙ্গে সাধন চন্দ্র মজুমদার আরও বলেন, শুধু চাল মজুত নয়, অন্যান্য খাদ্য মজুতের ক্ষেত্রেও ঘাটতি হওয়ার আশঙ্কা নেই। গম মজুতের ক্ষেত্রে একটা সমস্যা ছিল, সেটাও কেটে গেছে। রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে ইতিমধ্যে গম আমদানির ব্যবস্থা হয়েছে।
মানুষের কষ্ট লাঘবের জন্য ওএমএসের ডিলার প্রায় তিন গুণ বাড়ানো হয়েছে উল্লেখ করে সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, ‘সম্প্রতি আমাদের হিসাবের বাইরে হঠাৎ চালের দাম পাঁচ থেকে ছয় টাকা বেড়ে যায়। এতে মানুষ দুর্ভোগে পড়েছেন। মানুষের এ কষ্ট লাঘবের জন্য প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে সারা দেশে এক যোগে ওএমএস ও খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি চালু থাকবে। আগে সারা দেশে ৮১৩টি ওএমএস কেন্দ্র চালু ছিল। এবার সেই সংখ্যা বাড়িয়ে ২ হাজার ৩৬৩টি করা হয়েছে। আগে একজন ওএমএসের ডিলার এক টন চাল বরাদ্দ পেতেন। এখন প্রত্যেক ডিলার দুই মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ পাবেন। এ ছাড়া সিটি শহরগুলোয় ট্রাক সেলে সাড়ে তিন মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ পাবেন।’
সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, ওএমএসের মাধ্যমে বিতরণ করা প্রতি কেজি চালের মূল্য হবে ৩০ টাকা। ওএমএস কেন্দ্রে টিসিবি কার্ডধারী ব্যক্তিদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। টিসিবি কার্ডধারীরা কার্ড দেখিয়ে এবং সাধারণ মানুষ জাতীয় পরিচয়পত্র দেখিয়ে মাসে দুই বার পাঁচ কেজি করে চাল কিনতে পারবেন। এক ব্যক্তি যেন বারবার চাল কিনতে না পারেন, সেটাও নিশ্চিত করা হবে।
খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার আরও বলেন, খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির মাধ্যমে সারা দেশে ৫০ লাখ পরিবারের মধ্যে চাল বিতরণ করা হবে। প্রতিটি পরিবার ১৫ টাকা কেজি দরে মাসে একবার ৩০ কেজি চাল কিনতে পারবে। লক্ষ্যমাত্রার ৫০ লাখ পরিবারের মধ্যে ইতিমধ্যে ৮০ শতাংশ পরিবারের যাচাই-বাছাই কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আগামী মাসের মধ্যে বাকি ২০ শতাংশ পরিবারের যাচাই-বাছাই কাজ শেষ হবে। ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করে সুবিধাভোগী প্রতি পরিবারকে স্মার্ট কার্ড দেওয়া হবে। এর ফলে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচিতেও কেনো অনিয়মের সুযোগ থাকবে না। এদিকে তেলের দাম কমানো, ওএমএস ও খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি চালুর ফলে কিছু দিনের মধ্যেই বাজারে চালের দাম সহনীয় মাত্রায় চলে আসবে।
সংবাদ সম্মেলনে নওগাঁ জেলা চালকল মালিক গ্রুপের সভাপতি রফিকুল ইসলাম, জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আলমগীর কবির ও খাদ্য অধিদপ্তরের অন্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।