fbpx

দেশে দেশে বর্ষবরণ

Pinterest LinkedIn Tumblr +
Advertisement

বিশ্বের বেশিরভাগ দেশই গ্রেগোরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুযায়ী অর্থাৎ ইংরেজি নববর্ষই পালন করে থাকে। নিজস্ব প্রথা ও সংস্কৃতি অনুযায়ী নানা আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে পালন হয় বিশেষ এই দিনটি।

দেশে দেশে উৎসব আয়োজনে যেমন ভিন্নতা রয়েছে তেমনি, আলাদা আলাদা দিনেও কিন্তু নববর্ষ পালন করে অনেক দেশ। এশিয়ার অনেক দেশেই নববর্ষ আসে এপ্রিলের দিকে। তবে খ্রিষ্টীয় নববর্ষ উদযাপনে দ্বিধা নেই।

বাংলাদেশে সীমিত আকারে ইংরেজী নববর্ষ উদযাপন করা হলেও মূলত বাংলা পঞ্জিকার প্রথম মাস ১ লা বৈশাখেই বর্ষবরণ হয়। ভারতের পশ্চিমবঙ্গেও এই দিনেই বর্ষ বরণ হয়। মঙ্গল শোভাযাত্রাসহ নানা রকম সংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে গোটা জাতি এই উৎসবে মেতে ওঠে। শহরে গ্রামে বসে বৈশাখী মেলা। পিঠাপুলি, পান্তা-ইলিশসহ নানা রকম বাহারি খাবারে ধুম পড়ে যায় বাংলার ঘরে ঘরে।

দেশে দেশে বর্ষবরণ

মঙ্গল শোভাযাত্রা। ছবি : সংগৃহীত

বাংলা নববর্ষের মতই ১৪ এপ্রিল বর্ষ বরণ হয় শ্রীলঙ্কায় । কথিত আছে সূর্য দেবতার আরাধনার রীতি থেকেই তামিল নববর্ষ পালনের উৎপত্তি। এপ্রিলের ১৪ তারিখ যখন সূর্য ঠিক মাথার উপর থাকে তখনই বর্ষবরণ উৎসব শুরু হয়। লঙ্কানরা এই উৎসবের মাধ্যমে নতুন ফসল ঘরে তোলার সমাপ্তি করে।

দেশে দেশে বর্ষবরণ

শ্রীলংকায় বর্ষবরণের উপাদান। ছবি : সংগৃহীত

চীনে লুনার ক্যালেন্ডারের প্রথম দিনই নতুন বর্ষ পালন করা হয়। তবে মজার বিষয় হচ্ছে প্রতিবছর একই দিনে নববর্ষ হয় না। এটি নির্ভর করে আকাশে চাঁদ দেখার উপর। ২০ জানুয়ারি থেকে ২১শে ফেব্রুয়ারির মধ্যে এই চাঁদ দেখা যায় । একে বলা হয়, ‘উয়ান ট্যান’। ১৫ দিন ধরে চলা এই উৎসব পৃথিবীর ইতিহাসে অন্যতম প্রাচীন বর্ষবরণ উৎসব। চীন ছাড়াও সিঙ্গাপুর, ইন্দোনেশিয়া, মালয়শিয়া, ফিলিপাইন, থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া, অস্ট্রেলিয়া এবং মরিশাসে লুনার ক্যালেন্ডার অনুযায়ী নববর্ষ উদযাপন হয়।

দেশে দেশে বর্ষবরণ

পৃথিবীর ইতিহাসে অন্যতম প্রাচীন উৎসব চীনের বর্ষবরণ, ছবি: সংগৃহীত

থাইল্যান্ডের বাসিন্দাদের কাছে নববর্ষ মানে ‘সংক্রাণ’। দেশটিতে ১৩ এপ্রিল নববর্ষ পালন করা হয়।  ধারণা করা হয় ভারতের ‘মকর সংক্রান্তি’ উৎসব থেকে সংক্রাণ নামটি এসেছে। এখান নতুন বছরে স্বাগত জানানো হয় একে অন্যকে পানি ছোড়ার মধ্য দিয়ে। এর মাধ্যমে আসলে বৃষ্টির জন্য প্রার্থনা জানান তারা।

দেশে দেশে বর্ষবরণ

নববর্ষে বৃষ্টির জন্য প্রার্থনা জানান থাইল্যান্ডের বাসিন্দারা, ছবি: সংগৃহীত

নেপালেরও রয়েছে নিজেদের নববর্ষ। দেশটিতে বিক্রম সংবৎ বর্সপঞ্জি অনুযায়ি বর্ষবরণ হয়। বসন্তকালে হওয়া এই উৎসব পরিচিত ‘ বিসকে’ নামেও। সাধারণত ১০ থেকে ১৯ এপ্রিল পর্যন্ত চলে এই উৎসব।

দেশে দেশে বর্ষবরণ

বসন্তকালে হওয়া এই উৎব পরিচিত ‘ বিসকে  ‘ নামেও, ছবি: সংগৃহীত

ইসরাইলে বর্ষবরণ উৎসবকে বলা হয় রোশ হাশানাহ।  সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়ে এই উৎসব পালন করে। ইহুদীরা বিশ্বাস করে বছর শুরুর এই দিনেই মানবজাতির নারী- পুরুষ হাওয়া ও আদমকে সৃষ্টি করা হয়েছিল। প্রথা অনুযায়ী এই দিনটিকে প্রার্থনার পর মধু মিশ্রিত আপেলের পানি পান করেন তারা।

দেশে দেশে বর্ষবরণ

প্রথা অনুযায়ী এই দিন প্রার্থনার পর মধু মিশ্রিত আপেলের পানি পান করেন ইসরাইলিরা, ছবি: সংগৃহীত

পার্সিয়ান শব্দ ‘নওরোজ’ এর অর্থ নতুন দিন। প্রায় তিন হাজার বছর ধরে ইরান ও মধ্যপ্রাচ্যের বেশ কয়েকটি দেশে নববর্ষ উৎসব হিসেবে নওরোজ পালিত হয়ে আসছে। ইরানে টানা ১৩ দিন ধরে এই উৎসব পালন করা হয়। আর আফগানিস্তানে হয় ৩ দিন ধরে।  এটিও পৃথিবীর প্রাচীনতম উৎসবের একটি।  মধ্যপ্রাচ্য ছাড়াও  মধ্য এশিয়া, ককেশাস, কৃষ্ণ সাগরীয় অঞ্চল এবং বলকান অঞ্চলের বেশ কিছু দেশে এই উৎসব পালন করা হয়।  ২০১০ সালে এই দিবসটিকে ‘আন্তর্জাতিক নওরোজ দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করেছে জাতিসংঘ।

দেশে দেশে বর্ষবরণ

ইরানে টানা ১৩ দিন ধরে বর্ষবরণের উৎসব চলে, ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের নতুন বছর উদযাপনের কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে টাইমস স্কোয়ার। নতুন বছর শুরু হওয়ার ১০ সেকেন্ড আগে এক বিশালাকার ক্রিস্টাল বল নেমে নতুন বর্ষের আগমনের কাউন্টডাউন শুরু করে। এটিই বিশ্বের সবচেয়ে বড় নিউ ইয়ার পার্টি। এতে প্রায় ৩০ লাখ লোক অংশগ্রহণ করে।

দেশে দেশে বর্ষবরণ

যুক্তরাষ্ট্রের নতুন বছর উদযাপনের কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে টাইমস স্কয়ার, ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাজ্যে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুযায়ী শুরু হয় নতুন বছর। নববর্ষের আগ মুহূর্তে লন্ডনে ট্রাফালগার স্কয়ার এবং পিকাডেলি সার্কাসে বড় ধরণের জনসমাবেশ হয়। মধ্যরাতে বিগবেনের ধ্বনি শুনে তারা বর্ষ বরণ করে নেয়। আঁতশবাজির জলকানিতে মেতে ওঠে পুরো এলাকা। দিনটিকে কেন্দ্র করে আয়োজন হয সার্কাস, পার্টি মিউজিক ও নাচগানের আসর।

গ্রিসের একেবারে ভিন্ন রকম ভাবে পালন হয় নববর্ষ। খ্রিষ্টীয় বর্ষ অনুযায়ী দিনটি উদযাপন হয় এখানে। এই দিন ঘরে ঘরে অতিথিদের আনাগোনো বেড়ে যায়। অতিথিরা যেই বাড়িতে যান, সে বাড়িতে ছোট ছোট পাথরের টুকরো যান। আর বাড়ির বাইরে দাঁড়িয়ে সে পাথর ছুড়ে মারের তারা। তাদের বিশ্বাস এতে নতুন বছরে টাকা-পয়সা ও সাফল্য আসে। এ দেশের শিশুরা জুতো খুলে দরজায় রেখে দেয়। আশা করে, সেন্ট ভাসিলি এসে এই জুতাগুলো ভরে দেবে উপহারে।

এমন নানা রকম আয়োজনে বিশ্ব জুড়ে ভিন্ন রূপে আসে বর্ষ বরণ। দিন বা উৎসবের ধরণ যাই হোক, সব দেশের মানুষের কাছেই নতুন বছর মানে মঙ্গলের জন্য প্রার্থনা। সব হিংসা -বিদ্বেষ ভুলে নতুন আশায়, নতুর স্বপ্নের শুরু হয় এই দিন থেকেই।

Advertisement
Share.

Leave A Reply