fbpx

নারায়ণগঞ্জে র‍্যাব-পুলিশের সঙ্গে ক্যাম্পের বাসিন্দাদের সংঘর্ষ: আহত ২০

Pinterest LinkedIn Tumblr +
Advertisement

নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ উপজেলার আদমজী বিহারি ক্যাম্পের বাসিন্দাদের সঙ্গে র‍্যাব-পুলিশের সংঘর্ষে অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন বলে দাবি করেছে দুই পক্ষ। সোমবার (১৩ জুন) সকালে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা এলাকায় এই সংঘর্ষ হয়।

ক্যাম্পের অধিবাসীদের ছোঁড়া ইট-পাটকেলের জবাবে পুলিশ-র‍্যাব গুলি ও কাদুনে গ্যাস ছোঁড়ে। এতে এলাকাবাসীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। এ ঘটনায় এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।

প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ জানায়, গত শুক্রবার আদমজী জেনেভা ক্যাম্প এলাকায় অবস্থিত আদমজী জামে মসজিদে জুমার নামাজের আগে বক্তব্য দেওয়ায় এক পুলিশ কর্মকর্তার ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার জের ধরে রবিবার রাত থেকে সোমবার ভোর পর্যন্ত ক্যাম্পে অভিযান চালিয়ে ৩২ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

এদিকে আটককৃতদের ছেড়ে দিতে সকাল সাড়ে সাতটার দিকে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার সামনে বিক্ষোভ শুরু করেন কয়েক শ’ নারী-পুরুষ। একপর্যায়ে তারা সড়কের ওপর কাঠের টেবিল, চৌকি ফেলে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়। এতে নারায়ণগঞ্জ-আদমজী-ডেমরা সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ভোগান্তিতে পড়েন পোশাক কারখানার শ্রমিকেরা। এসময় বিক্ষোভকারীদের সড়ক থেকে সরে যাওয়ার অনুরোধ করে পুলিশ। তবে তারা না সরায় পুলিশ ও র‍্যাব একসঙ্গে লাঠিপেটা করে এবং শর্টগানের গুলি ও কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।

ক্যাম্পের অধিবাসীদের দাবি, পুলিশ ঘটনার সঙ্গে জড়িত নয়, এমন লোকজনকে গ্রেপ্তার করেছে। তবে তাদের এই অভিযোগ অস্বীকার করে পুলিশ বলছে, অভিযানে যদি নিরপরাধ কেউ আটক হন, তবে তাদের আলোচনার মাধ্যমে ছেড়ে দেওয়া হবে। কিন্তু বিক্ষোভকারীরা সবাইকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য পুলিশকে চাপ দিতে থাকে। একপর্যায়ে তারা পুলিশের সাথে তর্কে জড়ায়। সকাল নয়টার দিকে তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট–পাটকেল ছোড়ে। এরপর পুলিশ তাঁদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।

বিহারি ক্যাম্পের চেয়ারম্যান লিয়াকত হোসেন বলেন, শুক্রবার মসজিদে পুলিশের এক উপপরিদর্শকের (এসআই) ওপর হামলার ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করেছে। ওই মামলায় রবিবার রাত থেকে সোমবার ভোর পর্যন্ত বিপুলসংখ্যক পুলিশ ক্যাম্পের ভেতর অভিযান চালিয়ে ৩২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। অভিযানের সময় অনেক নারী-পুরুষকে মারধর করেছে পুলিশ। ঘটনার সময় মসজিদে যায়নি এবং হামলার সময় যারা ছিলেন না, তাদেরও আটক করা হয়েছে। এ ঘটনায় ক্যাম্পের বাসিন্দারা ক্ষুব্ধ হন। সংঘর্ষে ক্যাম্পের অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন বলে দাবি করেন তিনি।

সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মশিউর রহমান বলেন, পুলিশের ওপর যারা হামলা করেছে, তারা মাদক ব্যবসায়ী ও কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য। সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) আমির খসরু বলেন, বিহারি ক্যাম্পের বাসিন্দারা আটক ব্যক্তিদের ছেড়ে দেওয়ার দাবিতে থানার সামনে সড়ক অবরোধ করে। পুলিশ তাদের সড়ক থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলে তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট–পাটকেল নিক্ষেপ করে। এসময় পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে শর্টগানের শতাধিক গুলি ও কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশের পাঁচ সদস্য আহত হয়েছেন বলেও দাবি করেন তিনি।

উল্লেখ্য, গত শুক্রবার আদমজী জামে মসজিদে জুমার নামাজের খুতবার আগে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার এসআই আজিজুল হক মুসল্লিদের উদ্দেশে বলেন, ‘ভারতে মহানবী (স.)–কে নিয়ে কটূক্তি করা হয়েছে, সে কারণে প্রতিবাদ হচ্ছে। ভারতের বিষয় ভারতে থাক। ভারতের বিষয়ে এখানে আমরা না আনি। প্রতিবাদ করব, কিন্তু যেন বিশৃঙ্খলা না হয়।’

এই বক্তব্যকে কেন্দ্র করে বিক্ষুব্ধ লোকজন তার ওপর হামলা চালালে তিনি আহন হন। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে ৫০ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা ১২০ থেকে ১২৫ জনকে আসামি করে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় মামলা করে।

Advertisement
Share.

Leave A Reply