ফার্মেসি বা ওষুধের দোকানের মাধ্যমে অতিগুরুত্বপূর্ণ ওষুধ খুচরা পর্যায়ে জনসাধারণের কাছে এসে পৌঁছায়। প্রতিনিয়তই দেশের ফার্মেসির সংখ্যা বাড়ছে। ফার্মেসিতে ওষুধ সংরক্ষণ ও বিপণনের ক্ষেত্রে বহুবিধ নিয়ম কানুন মেনে চলতে হয়ে। নিবন্ধন প্রদানকারী সংস্থা ঔষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর নিয়মিতভাবে এসকল ফার্মেসি মনিটরিং করেন।
কিন্তু গত বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত মাত্র ৫ মাসে ৪৬ হাজার ওষুধের দোকানের নিবন্ধন দিয়েছে সংস্থাটি। এত অল্প সময়ে এত সংখ্যক ফার্মেসিকে নিবন্ধন দেয়ায় ওষুধের মান ও গুণাগুণ বজায় রাখা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। নকল, ভেজাল, মেয়দ উত্তীর্ন ও মানহীন ওষুধ বাজারজাতকরনের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
ওষুধ প্রযুক্তি ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ওষুধের মান শুধু কাঁচামাল ও উৎপাদন ব্যবস্থার ওপর নির্ভর করে না। যথাযথভাবে সংরক্ষণ, পরিবহন ও বিপণন করা না হলে নষ্ট হবে ওষুধের গুণাগুণ। কখনো কখনো তা জীবনের ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। প্রতিনিয়তই কর্তৃপক্ষ ফার্মেসির সংখ্যা বাড়াচ্ছে। ওষুধের মতো জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে অবহেলা করছে সংস্থাটি।
ওষুধ বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, দেশে দুই-তৃতিয়াংশ ওষুধের দোকানে নেই শীততাপ নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থা। তাপমাত্রা কিছুটা পরিবর্তন হলেই নষ্ট হয়ে যায় ওষুধের কার্যকারিতা। তাই শুধু দেশে ওষুধের দোকান সংখ্যা বাড়ালেই হবে না দোকানের উন্নত পরিবেশও নিশ্চিত করতে হবে।
গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর প্রকাশিত বার্ষিক প্রতিবেদনে (২০২০-২১ ) বলা হয়, দেশে ১ লাখ ৫৫ হাজার ৫৮৯টি নিবন্ধনধারী ওষুধ বিক্রির ফার্মেসি রয়েছে। এরপর ওই বছরের জুন পর্যন্ত মাত্র পাঁচ মাসে আরো ৪৬ হাজার ৮৭৯টি ফার্মেসিকে নিবন্ধন দেয়া হয় বলে গত ডিসেম্বরে প্রকাশিত বার্ষিক প্রতিবেদনে (২০২১-২২) উল্লেখ করা হয়েছে।
বর্তমানে দেশে মোট ফার্মেসির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ২ হাজার ৪৮৬। এসব ফার্মেসিকে নির্ধারিত নিয়ম মেনেই নিবন্ধন দেয়া হয়েছে বলে দাবি করেছে সংস্থাটি। সর্বশেষ প্রকাশিত বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী,ঢাকা জেলায় ফার্মেসির সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। এ জেলায় ২৭ হাজার ৮০০ ফার্মেসি রয়েছে। আর সবচেয়ে কম পার্বত্য জেলা বান্দরবানে ৪৫০।
ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর ১৯৪৬ সালের ওষুধ আইন ( দ্য বেঙ্গল রুলস আফ ড্রাগস) অনুযায়ী আবেদনের বিপরীতে এসব ফার্মেসিকে নিবন্ধন দিয়ে থাকে। ফার্মেসিগুলো আবেদনের সময় নির্দিষ্ট কাগজপত্র জমা দিয়ে থাকেন।
ফার্মেসিগুলেকে নিয়ম আনুযায়ী প্রতি দুই বছর পর পর নিবন্ধন নবায়ন করতে হয়। ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের পরিচালক ও মুখপাত্র মো. আইয়ুব হোসেন বলেন, ‘ আবেদনের ভিত্তিতেই সাধারণত ফার্মেসিগুলোকে নিবন্ধন দেয়া হয়। আমরা চেষ্টা করছি যে বিনা লাইসেন্সে কোন ওষুধের দোকান থাকবে না। যাদের লাইসেন্সে নেই তাদেরকে আমরা সময় দিচ্ছি। আবার কোথাও কোথাও দোকান সিলগালা করে দিচ্ছি। এ কারণেই এখন লাইসেন্সের আবেদন আগের তুলনায় অনেকগুণ বেড়েছে।
সূত্র : বণিক বার্তা