বিএমআর এবং বিএমআই— শব্দ দু’টি আমাদের অতি পরিচিত হলেও এর অর্থ এবং কার্যকারিতা সম্পর্কে অনেকে অবহিত নন। বডিমাস ইনডেক্স মানে বিএমআই। অন্যদিকে বিএমআর এর পুরো কথাটি হল, বেসাল মেটাবলিক রেট। দুটি শব্দই শরীরের মেটাবলিজমের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। বডিমাস ইনডেক্স পরিমাপ করা সম্ভব। ডায়েট এবং এক্সারসাইজের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণও করা সম্ভব। বেসাল মেটাবলিক রেট অর্থাৎ বিপাক হার নির্ভর করে একজনের সারাদিনে কতটা এনার্জি প্রয়োজন তার উপরে। বিশ্রামরত অবস্থায় প্রতি মিনিটে কত এনার্জি প্রয়োজন হয়, সেটিই হল তার বিএমআর। কায়িক পরিশ্রম বাড়া-কমার সাথে সাথে তার হ্রাসবৃদ্ধি ঘটে।
বিপাক হারের ওঠানামা
দৈনন্দিন ডায়েটের মাধ্যমে একজনের কত ক্যালরি গ্রহণ করা উচিত, তা নির্ধারণ করার জন্যই সেই ব্যক্তির বিএমআর সম্পর্কে জানা প্রয়োজন। একজন কৃষক বা দিনমজুর দিনে গড়ে ছয়-সাত ঘণ্টা কায়িক পরিশ্রম করেন। ওই ছয়-সাত ঘণ্টা তাঁর বিএমআর সবচেয়ে বেশি থাকবে। সেই ব্যক্তিই যখন বাড়ির টুকটাক কাজকর্ম করেন তখন বিএমআর মাঝারি থাকবে এবং ঘুমের সময় থাকবে সর্বনিম্ন। যাঁরা ততটা কায়িক পরিশ্রম করেন না, সেডেন্টারি লাইফস্টাইলে অভ্যস্ত, তুলনামূলকভাবে তাঁদের মেটাবলিক রেট বা বিপাক হার কম। ফলে তাঁরা যা খান, তার বেশির ভাগটাই শরীরে জমে। যে পরিমাণ ক্যালরি তাঁরা গ্রহণ করেন, তা এক্সারসাইজ করে ঝরিয়ে ব্যালান্স না করলে ওভারওয়েট হয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকে।
সাধারণত জীবনযাত্রায় অভ্যস্ত মানুষদের দিনে কমবেশি ১৮০০ থেকে ২২০০ কিলোক্যালরি দরকার হয়। তার চেয়ে বেশি ক্যালরি ইনটেক হলেই বেড়ে যায় বডিমাস, যে সমস্যা খুব পরিচিত। তাই বয়স, ওজন, খাদ্যাভ্যাস ও কাজের ধরন অনুযায়ী এনার্জির প্রয়োজন কত, সেই সংক্রান্ত পরামর্শ নেওয়ার সময়ে পুষ্টিবিদরা সেই ব্যক্তির বিএমআর নির্ণয় করে থাকেন।
ব্যায়াম ও বিপাক
চেহারা রোগা বা স্থূলকায় যেমনই হোক, ঠিক বিপাক হার ও উচ্চতা অনুযায়ী বডিমাস ইনডেক্স যথাযথ রাখা জরুরি। তার জন্য ডায়েটে নিয়ন্ত্রণ এবং এক্সারসাইজ দুইয়েরই প্রয়োজন আছে। এখন বিএমআই মাপার চেয়ে চিকিৎসকরা বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন ওয়েস্ট-হিপ রেশিয়ো পরিমাপে। যার কোমর যত সরু, তার পেটে তত কম চর্বি জমে। অর্থাৎ লিভার বা খাদ্যনালীতেও চর্বি কম জমে এবং মেদজনিত অসুখের সম্ভাবনাও কম থাকে। কোমরের মাপ যা হবে, তার চেয়ে ২০ শতাংশ বেশি হবে হিপ— এটাই আদর্শ অনুপাত। হাতে-পায়ে চর্বি থাকলে শরীরের পক্ষে ততটা ক্ষতিকর নয়, যতটা পেটে জমলে। পেট, কোমরের চর্বি ঝরানো আবশ্যক।
ঘাম ঝরিয়ে ব্যায়াম
অপুষ্টি এবং অতিপুষ্টি, দুই ক্ষেত্রেই পেটের অংশ স্ফীত হয়ে যাওয়ার প্রবণতা থাকে। যে কোনও ব্যায়ামই করুন, তাতে যেন ঘাম ঝরে। তবেই তা ফ্যাট বার্নের সহায়ক হবে। বিএমআই ঠিক রাখার জন্য যে কোনও ধরনের কার্ডিয়ো এক্সারসাইজ কার্যকর। সাধারণ দৌড়ানো, সাঁতার, সাইক্লিং ছাড়াও অ্যারোবিক্স, পিলাটেস, জুম্বা করতে পারেন। সারা দিনে ঈষদুষ্ণ গরম জল খান মাঝে মধ্যেই। বিশেষ করে এক্সারসাইজ শুরুর খানিকক্ষণ আগে। তার পরে জগিং দিয়ে শুরু করুন। ধীরে ধীরে জাম্পিং জ্যাক, কেটল বেল ইত্যাদি করে শেষে রোড রানিং, সাইক্লিং, সুইমিংয়ের মতো হোল কার্ডিয়ো এক্সারসাইজ করুন।
বিপাক হার কমে গেলে আলস্য ঘিরে ধরে। অন্য দিকে মহিলাদের ক্ষেত্রে থাইরয়েড, সিস্টের সমস্যা বেশি করে দেখা দেয়। তাই উচ্চতা অনুযায়ী বডি মাস রাখুন নিজের নিয়ন্ত্রণে। তবেই সুস্থ থাকবে শরীর।