ছোটবেলায় আমরা কম বেশি সকলেই ভূতের গল্প শুনেছি। অনেক শিশু, ভয়ের গল্প শুনতে খুব আগ্রহ বোধ করে। অনেকে আবার ভয়ও পায়। ভয়ের গল্পগুলো শিশু মনে অনেক সময় বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে।
তবে মজার ব্যপার হল, ভয়ের গল্প গুলো একটু বুঝে শুনে শিশুদের উপস্থাপন করতে পারলে এর থেকে কিছু উপকারও পাওয়া যায়। তবে ৩/৪ বছরের নিচে কাউকে ভয়ের গল্প না শোনানোই ভাল। মোটামুটি ৫/৬ বছর থেকে ভয়ের গল্প শোনার জন্য শিশুরা মানসিক ভাবে প্রস্তুত হয়ে যায়। যদিও শিশু ভেদে তা কম বেশি হতে পারে। তবে একটি কথা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, বাচ্চাদের গল্পের বইয়ের তালিকায় কখনই ভয়ের গল্প এক নম্বরে রাখবেন না এবং দয়া করে বাচ্চাদের ভয়ের গল্প বলার সময় অনেক সাবধানি হবেন।
৩/৪ বছরের আগে,আপনার শিশু,বাস্তবতা আর ফ্যান্টাসি জগতের মধ্যে পার্থক্য করতে পারে না। তাই ওই বয়সের আগে ভয়ের গল্প পরিহার করবেন। ওই সময়ের কোন ভয়ের গল্প সারা জীবন আপনার শিশুর মগজে গেঁথে থাকতে পারে।
৫/৬ বছর থেকে শিশু ধীরে ধীরে বাস্তব ও কাল্পনিক বিষয়গুলোর পার্থক্য ধরতে পারবে। তাই এই সময়ে দু’ একটা ভয়ের গল্প বলতে পারেন। আপনারা যদি মনে করেন কখনই বাচ্চাদের ভয়ের গল্প বলবেন না। তাহলেও কিন্তু এর থেকে শিশুদের দূরে রাখতে পারবেন না। কারণ এর মধ্যেই শিশুরা স্কুলে যেতে শুরু করবে,সেখানে বন্ধু বান্ধব হবে,টিভি, ইন্টারনেট ইত্যাদি দেখতে শুরু করবে,সেখানে কার্টুন/সিনেমা এসব দেখবে তাই তারা কোন না কোন ভাবে ভয়ের বিষয়গুলো যেমন ভয়,মৃত্যু,ভয়ংকর প্রাণী এসবের মুখোমুখি হবে। তাই ভয়ের বিষয়গুলো ভুল ভাবে তাদের সামনে উপস্থাপিত হবার আগেই কন্ট্রোলটা নিয়ে নিতে হবে আপনার হাতে। এবং এটা হতে পারে গল্পের মাধ্যমে।
ভূতের গল্প বলার সময় ভূত নামক অবাস্তব বিষয়টি যে পুরোপুরি কাল্পনিক তা ভাল ভাবে বুঝিয়ে দিন শিশুদের। তাহলে স্কুলে শুনলে বা টিভিতে ভূত দেখলেও সে ততটা ভয় পাবে না। একটা সাহস তার মধ্যে আগেই কাজ করবে। ভয়ংকর প্রাণি আমাদের সমাজে আসতে পারে না। ওরা ওদের মত জংগলে বসবাস করে, সেটাও বুঝিয়ে দিন তাদের। আর মৃত্যুর বিষয়টি আরেকটু বয়স না হলে অবশ্য তারা বুঝবে না। তাই সেটা নিয়ে বিস্তারিত বলে লাভ হবে না। শুধু শিশুকে জানিয়ে দিন তার বাবা, মা, ভাই, বোন, সব আপনজন এবং সে নিজেও পুরোপুরি সুস্থ তাই এখন মারা যাচ্ছে না। যাতে ওই চিন্তাটা তার মাথায় কাজ না করে।
ভয়ের গল্পগুলো একটু থ্রিলিং হয় বলে আপনার শিশু তার মানসিক বাউন্ডারির বাইরে একটু বের হতে পারে। এতে কল্পনার জগত প্রসারিত হয়। আবার ভয়ের গল্পগুলো পড়ে শিশুদের মাথায় এই বিষয় ঢুকে যায় যে অপরিচিত জায়গায় বা মানুষের কাছে যাওয়া যাবে না এবং বিপজ্জনক কোন কাজ করা যাবে না। এই বিষয়টা অনেক সময় আপনি বলে তাকে বোঝাতে পারবেন না যতটা না একটা ভয়ের গল্প পারবে।
ভয়ের গল্পগুলো শুরুতে যেমনই হোক শেষমেষ কিন্তু ভয়কে অর্থাৎ ভূত/খারাপ ব্যাক্তিকে পরাজিত করে গল্পের মূল চরিত্রকে জয়ী দেখাতে হবে। শিশুদের গল্পে সবসময়ই সত্য এবং ন্যায়ের জয় দেখাতে হয়। সব খারাপ আর ভয়ের পরাজয় দেখাতে হয়। তাই ভয়ের বা ভুতের গল্প বাছাই করার সময় সেভাবেই করবেন। ভয়ের গল্প গুলোতেও যখন ভূত এর বা খারাপের পরাজয় ঘটবে এবং সবাই সুখে শান্তিতে বসবাস করতে থাকবে তখন শিশুও ভয়কে জয় করার একটা মনোবল পাবে। গল্পের মাধ্যমে তার সামনে একজন সাহসি আইডল দেখতে পাবে।
লেখক : তানজীল হাসান, প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও, সুপার কিড