fbpx

সকল শিক্ষার্থীদের জন্য হলের দুয়ার খুললো ঢাবি

Pinterest LinkedIn Tumblr +
Advertisement

স্নাতক চতুর্থ বর্ষ ও স্নাতকোত্তরের পর এবার প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীদের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আবাসিক হলগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে খুলে দেওয়া হয়েছে।

রবিবার (১০ অক্টোবর) সকাল ৮ থেকে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীদের হলে উঠানোর কার্যক্রম শুরু করে কর্তৃপক্ষ। এর আগে গত ৫ অক্টোবর স্নাতক চতুর্থ বর্ষ ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের জন্য হল খুলে দেওয়া হয়েছিল।

সকাল বেলা দেখা যায়, যেসব শিক্ষার্থী করোনা টিকার কমপক্ষে একডোজ নিয়েছেন, তাদের সেই সনদ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈধ পরিচয় পত্র দেখানো সাপেক্ষে প্রাধ্যক্ষ ও হাউজ টিউটররা হলে ওঠার অনুমতি দিচ্ছেন। এসময় হল কর্তৃপক্ষকে শিক্ষার্থীদের মাঝে মাস্ক-স্যানিটাইজারসহ স্বাস্থ্যসুরক্ষা সামগ্রী বিতরণ করতে দেখা যায়।

তবে হলে উঠতে শিক্ষার্থীদের তেমন ভিড় দেখা যায় নি। শিক্ষার্থীরা এর পেছনে দুটি কারণের কথা বলছেন।

একটি হলো- শিক্ষার্থীদের বড় অংশ আগেই হলে উঠে গেছে। দ্বিতীয়টি হলো ১৭ অক্টোবর থেকে সশরীর ক্লাস-পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা থাকায় এখনই অনেক শিক্ষার্থীরা হলে ফিরছেন না।

ছাত্রীদের পাঁচটি হলে সিট বণ্টনসহ প্রায় সব ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণ থাকলেও ছাত্রদের ১৩টি হলে কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণ তেমন নেই বললেই চলে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এ কে এম গোলাম রব্বানী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের বাইরে কিংবা অছাত্ররা হলে উঠেছেন—এমন কোনো অভিযোগ থাকলে হল কর্তৃপক্ষ বিষয়টি দেখবে। শিক্ষার্থীরা হলে ওঠার পর সবকিছু ‘স্বাভাবিকভাবেই’ চলছে বলে জানালেন প্রক্টর।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান সকাল ১০টায় ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হল ও রোকেয়া হল পরিদর্শন করেন।

তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘সব শিক্ষার্থীকে হলে ওঠানোর ক্ষেত্রে আমাদের করোনা সংক্রমণের হার ও শিক্ষার্থীদের টিকার অগ্রগতি মাথায় রাখতে হয়েছে। দুটিই এখন আশাব্যঞ্জক। যারা এখনো নেননি, তাদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ ডা. মোহাম্মদ মোর্তজা চিকিৎসাকেন্দ্রে অস্থায়ী টিকাকেন্দ্র করা হয়েছে। এনআইডির জন্য যারা টিকা নিতে পারছেন না, তাঁদের জন্য টিএসসিতে এনআইডি নিবন্ধনের বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ১৭ অক্টোবর সশরীর ক্লাস-পরীক্ষা শুরুর আগেই শিক্ষার্থীরা সবাই যাতে অন্তত এক ডোজ টিকা নিতে পারেন, তার জন্য সব ব্যবস্থা করা হবে।‘

হলে থাকাকালীন সময়ে শিক্ষার্থীদের মানতে হবে যেসব নির্দেশনা 

১. করোনাকালীন এই সময়ে হলগুলোতে শিক্ষার্থীরা কীভাবে থাকবে, রিডিং রুম,মসজিদ ও  ক্যান্টিন কীভাবে ব্যবহার করবে, সেসব বিষয়ে একটি এসওপি (স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসেডিউর) তৈরি করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভোস্ট স্ট্যান্ডিং কমিটি।

২. হল কর্তৃপক্ষ ও শিক্ষার্থীদের এই এসওপি মেনে চলতে নির্দেশনা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

৩. সকলকে বাধ্যতামূলকভাবে নিয়মিত ও সার্বক্ষণিক নিয়মমাফিক নাক-মুখ ঢেকে মাস্ক পরতে হবে। টিকা নেওয়ার পরেও সঠিক নিয়মে মাস্ক পরার পাশাপাশি অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।

৪. স্বাস্থ্যবিধি অনুযায়ী পরস্পরের কাছ থেকে কমপক্ষে ১ মিটার (৩ ফুট)  শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে।

৫. জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্ট, সংবেদন হ্রাস, মাংসপেশীতে ব্যথা, মাথা ব্যথা, চোখ গোলাপী হয়ে যাওয়া বা গলা ব্যথাসহ অন্যান্য কোভিড ১৯ লক্ষণ থাকলে বাড়ি বা হলের কক্ষে অবস্থান করতে হবে এবং তাৎক্ষণিক চিকিৎসার ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয় নির্ধারিত আইসোলেশন ও কোয়ারেন্টিন কেন্দ্রে বা হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করবে কর্তৃপক্ষ।

৬.  প্রতিটি কাজের আগে ও পরে সাবান দিয়ে হাত ভালোভাবে ধুতে হবে, হাত না ধুয়ে চোখ, নাক ও মুখ স্পর্শ করা যাবে না। করমর্দন এবং আলিঙ্গন করা থেকে বিরত থাকতে হবে।

৭,. যেখানে সেখানে কফ-থুথু ফেলা যাবে না, হাঁচি-কাশি দেওয়ার সময় হাতের কনুই-এর ভাঁজে বা টিস্যু দিয়ে মুখ ও নাক ঢাকতে হবে। প্রবেশ ও বহির্গমন পথে ভিড় এড়িয়ে চলতে হবে এবং দৈহিক তাপমাত্রা পরিমাপ করতে হবে। ক্লাসরুম, পরীক্ষার হল, লাইব্রেরি, ল্যাবরেটরি ও অফিসসমূহে পর্যন্ত আলো-বাতাসের ব্যবস্থা রাখতে হবে এবং নিয়মিত জীবাণুমুক্ত করতে হবে। এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পদ্ধতি ও নিয়ম (এসওপি) অনুসরণ করতে হবে।

৮. হঠাৎ কেউ অসুস্থতা বোধ করলে অবিলম্বে মেডিক্যাল সেন্টারে যোগাযোগ করতে হবে।

৯.  শিক্ষার্থীদের নিজ নিজ কক্ষ এবং কক্ষের আশপাশ সবসময় নিজ দায়িত্বে পরিষ্কার রাখতে হবে এবং এক্ষেত্রে হল প্রশাসন সহযোগিতা করবে।

১০.  হল ডাইনিং, ক্যান্টিন, মেস, দোকান, সেলুন, রিডিংরুম, অডিটোরিয়াম, টিভিরুম, অতিধিকক্ষ, পাঠাগার, মসজিদ ও উপাসনালয়ে ভিড় করা যাবে না। এসব স্থানে শারীরিক ও সামাজিক দূরত্ব বিধি অনুসরণ এবং মাস্ক ব্যবহার করতে হবে।

১১.  ডাইনিংয়ে পালা করে খাবার খেতে হবে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত অতিথিকক্ষে শিক্ষার্থীদের সমাবেশ বন্ধ রাখতে হবে। বেড়াতে যাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে এবং সভা-সমাবেশ, রেস্তোরাঁ, পার্টি ও গণপরিবহন এড়িয়ে চলতে হবে।

চিকিৎসা সংক্রান্ত

১. কোনো আবাসিক শিক্ষার্থীর দীর্ঘস্থায়ী কোনো অসুখ-বিসুখ (যেমন উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, ক্যান্সার, ডায়াবেটিস প্রভৃতি) থাকলে তা আগেই হল প্রশাসনকে লিখিতভাবে জানাবেন। হলে অবস্থানকালে কোনো শিক্ষার্থী অসুস্থতা বোধ করলে দ্রুত চিকিৎসা কেন্দ্রের ডাক্তারের পরামর্শ নেবেন এবং সংশ্লিষ্ট আবাসিক শিক্ষককে অবহিত করবেন।

২. কোনো শিক্ষার্থীর কোভিড-১৯ উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হবে।

৩. বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে হাসপাতাল নির্দিষ্ট করা হয়েছে। কোভিড-১৯ মহামারী ব্যবস্থাপনার জন্য জনস্বাস্থ্য কার্যক্রম যেমন- রোগ সনাক্তের জন্য ক্যাম্পাসে নমুনা সংগ্রহের বুথ স্থাপন, মৃদু লক্ষণ ও লক্ষণবিহীন কোভিড-১৯ রোগীদের আইসোলেশন, কন্ট্যাক্ট ট্রেসিং, কোয়ারেন্টিনের ব্যবস্থা করতে হবে।

৪. কোভিড-১৯ রোগীদের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের শনাক্ত করার জন্য ক্লাসরুম, ল্যাব, হল, ডাইনং রুম প্রভৃতি স্থানে প্রবেশকারীদের তালিকা লিখিত বা ইলেক্ট্রনিক উপায়ে সংরক্ষণ করতে হবে। ১৪ দিনের মধ্যে একটি নির্দিষ্ট টিউটরিয়াল গ্রুপে/ক্লাসে/হলের ব্লকে কতজন কোভিড-১৯ শনাক্ত হলে তা সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হবে, রোগতত্ত্ববিদদের সাথে পরামর্শ করে তা ঠিক করতে হবে।

খাদ্য ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা

১. সুষম খাবার খেতে হবে এবং পরিমাণমত পানি পান করতে হবে, অস্বাস্থ্যকর খাবার পরিহার করতে হবে।

২. নিয়মতান্ত্রিক ও সুশৃঙ্খল জীবন যাপন করতে সচেষ্ট থাকতে হবে, বেশি রাত পর্যন্ত জেগে থাকা যাবে না, পরিমিত সময় পর্যন্ত বিশ্রাম নিতে হবে।

৩. খেলাধুলায় ও সহশিক্ষা কার্যক্রম যেমন- খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে ‘অধিকতর মনোনিবেশ’ করতে হবে; প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট শরীরচর্চা করতে হবে, স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজে যুক্ত থাকতে হবে।

৪. ক্যান্টিন/ক্যাফেটেরিয়ায় একাধিক গেট থাকলে, একটি গেট প্রবেশের জন্য এবং অন্যটি বহির্গমনের জন্য ব্যবহার করতে হবে।

৫. ক্যান্টিন/ক্যাফেটেরিয়ায় পালাক্রমে খাবার খেতে হবে। তবে বোতলজাত পানীয় এবং ডিসপোজেবল পাত্রে খাবার সংগ্রহ করে রুমে বসে খাওয়া বেশি নিরাপদ। একই সময়ে কর্মীদের সংখ্যা সীমিত করতে ১০-১৫ মিনিটের ব্যবধানসহ শিফট পরিচালনা করতে হবে।

৬. স্বাস্থ্য ঝুঁকি এড়াতে ব্যবহৃত ছুরি-চামচ, খাবারপাত্র, কাপ ইত্যাদি পুনঃব্যবহারের আগে ডিটারজেন্ট দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে। শিক্ষার্থীদের নিজ নিজ কক্ষ এবং কক্ষের আশপাশ সবসময় নিজ দায়িত্বে পরিষ্কার রাখতে হবে।

৭. হল ডাইনিং, ক্যান্টিন, মেস, দোকান, সেলুন, রিডিংরুম, অডিটোরিয়াম, টিভিরুম, অতিথিকক্ষ, পাঠাগার, মসজিদ ও উপাসনালয়ে ভিড় করা যাবে না। এসব স্থানে শারীরিক ও সামাজিক দূরত্ব বিধি অনুসরণ এবং মাস্ক ব্যবহার করতে হবে।

Advertisement
Share.

Leave A Reply