fbpx

সাঁওতাল বিদ্রোহের ১৬৬ বছর

Pinterest LinkedIn Tumblr +
Advertisement

সাঁওতাল বিদ্রোহের ১৬৬ বছর পূর্ণ হচ্ছে আগামীকাল। ৩০ জুন সাঁওতাল বিদ্রোহ দিবস। বৃটিশদের বিরুদ্ধে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠির প্রথম সংগঠিত আন্দোলন ছিল এই সাঁওতাল বিদ্রোহ। ১৮৫৫ সালের ৩০ জুন সাঁওতাল বিদ্রোহের অন্যতম দুই নেতা সিধু ও কানহু ভাগনাডিহির মাঠে হাজার-হাজার সাঁওতাল ও হিন্দু-মুসলিম, চামার, বাগদিসহ নানান ধর্ম ও জাতের মানুষদের ইংরেজ ও ব্যবসায়ী-ব্যাপারীদের মাত্রাছাড়া শোষণের বিরুদ্ধে লড়াই করার ডাক দিয়েছিলেন।

সিধু ও কানহু ভ্রাতৃদ্বয় বৃটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রথম দিকের সাঁওতাল বিদ্রোহের দু’জন সর্বশ্রেষ্ঠ নেতা। কিছু লোকের বিশ্বাসঘাতকতার ফলে সিধু গ্রেপ্তার হন। পরে তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। কানহু মুরমু ছিলেন তার অনুজ এবং অপর বীরদ্বয় চাঁদ ও ভৈরব তার অপর দু’জন অনুজ ভ্রাতা। ১৮৫৬ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি ভাগনাডিহির মাঠে পাঁচকাঠিয়া বট বৃক্ষে ফাঁসির মঞ্চে তোলা হয় তাকে।

ফাঁসির মঞ্চ থেকে তিনি ঘোষণা করেছিলেন-“আমি আবার আসব, আবার সারা দেশে বিদ্রোহের আগুন জ্বালিয়ে তুলব। ৪৫মিনিট তাঁর দেহটি ফাঁসিকাঠে ঝুলিয়ে রাখার পর, সেটিকে নামিয়ে এনে পুড়িয়ে ফেলা হয়। বর্বর ইংরেজ সরকার কানুর মৃতদেহটি তার আত্মীয়দের হাতে তুলে দেবার সৌজন্য পর্যন্ত বোধ করেনি। ভৈরব ও চাঁদ ভাগলপুরের কাছে এক ভয়ংকর যুদ্ধে প্রাণ বিসর্জন করেন।

যে সব কারণে সাঁওতাল বিদ্রোহ ঘোষণা করে…

বিপুল রাজস্ব আরোপ করার কারণেই সাঁওতাল বিদ্রোহের ঘোষণা করা হয়েছিল। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠি সাঁওতাল অরণ্য অঞ্চলের পতিত জমি উদ্ধার করে চাষবাস করে সেই জমিকে উর্বর করে তুলেছিল কিন্তু ব্রিটিশ সরকার সেই জমির উপরে উচ্চহারে রাজস্ব চাপায়, আর এক্ষেত্রে ব্রিটিশ সরকার নিযুক্ত জমিদাররা মুখ্য ভূমিকা গ্রহণ করেছিল ফলস্বরূপ এই উচ্চ রাজস্বের চাপে সাঁওতালরা তাদের জমি ছেড়ে দিতে বাধ্য হয় যা তাদের প্রথম থেকেই ক্ষুব্ধ করেছিল।

ভূমি রাজস্ব ছাড়াও সরকার, জমিদার প্রমুখ সাঁওতালদের ওপর বিভিন্ন ধরনের করের বোঝা চাপিয়ে দেয় ফলে দরিদ্র সাঁওতালদের দুর্দশা ক্রমশ আরো প্রকট হয়ে ওঠে।

তখন মহাজনদের শোষণ অনুযায়ী, সাঁওতালরা নগদে ভূমি রাজস্ব ও অন্যান্য কর পরিশোধের জন্য বাধ্য হয়ে মহাজনদের কাছ থেকে অত্যন্ত চড়া সুদে ঋণ নিতে বাধ্য হতো। পরবর্তীকালে ঋণের দায়ে তারা তাদের জমি, ফসল, বলদ, সমস্তকিছুই মহাজনদের কাছে হারাতো।

একইসাথে তাদের সাথে ব্যবসয়ীরা প্রতারণা করেন, বহিরাগত ব্যবসায়ীরা অর্থাৎ দিকুরা কেনারাম ও বেচারাম বাটখারা ব্যবহার করে সাঁওতালদের প্রতিনিয়ত ঠকাতো। আর এই বিষয়টি সাঁওতালরা যখন জানতে পারে তখন তাদের ক্ষোভ আরো তীব্র হয়ে ওঠে।

এছাড়া সাঁওতাল অধ্যুষিত অঞ্চলে রেলপথ নির্মাণের কাজে সাঁওতাল শ্রমিকদের নিয়োগ করে তাদের খুব কম মজুরি দেয়া হতো। রেলের ঠিকাদার ও ইংরেজ কর্মচারীরা সাঁওতাল পরিবারগুলির ওপর নানাভাবে অত্যাচার করতো ।

বাতিল করা হয়েছিল সাঁওতাল আইন, রাজমহল পাহাড় এর প্রান্তদেশে অর্থাৎ দামিন-ই-কোহ হতে যেখানে সাঁওতালরা থাকতো উক্ত এলাকাতে সাঁওতালদের নিজস্ব আইন ও বিচার পদ্ধতি বাতিল করে ব্রিটিশ সরকার এই এলাকায় ইংরেজদের জটিল আইন ও বিচার ব্যবস্থা চালু করে , যা সাঁওতালদের মোটেই পছন্দ হয়নি।

সাঁওতাল রমণীদের প্রতি অন্যায় আচরণ, সাঁওতালদের জোর করে অন্যধর্ম গ্রহণে বাধ্য করা; সাঁওতালদের নীলচাষে বাধ্য করা সাঁওতালদের স্বাধীনতার দাবি প্রভৃতি সাঁওতাল বিদ্রোহের পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করেছিল। এতে তারা অবমূল্যায়িত হতো।

কলিয়ান হাড়াম ছিলেন সাঁওতাল বিদ্রোহের ইতিহাসের লিপিকার তার রচনায় সাঁওতাল বিদ্রোহের ইতিবৃত্ত রেখে গেছেন। এই ইতিবৃত্তে সাঁওতাল বিদ্রোহের নায়ক সিধু ও কানহুর সংগ্রাম-ধ্বনি, যথা : রাজা-মহারাজাদের খতম করো”, “দিকুদের (মহাজনদের) গঙ্গা পার করে দাও, ‘আমাদের নিজেদের হাতে শাসন চাই’ প্রভৃতি লিপিবদ্ধ আছে।

তথ্য সূত্র বাসস

Advertisement
Share.

Leave A Reply