fbpx

সিলেটে ফের বন্যার শঙ্কা

Pinterest LinkedIn Tumblr +
Advertisement

গত বছরের বন্যার স্মৃতি মনে হলে এখনো আঁতকে ওঠে সিলেটবাসী। এরই মধ্যে সিলেটে ফের বন্যার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। গত তিনদিন টানা বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টি আরো ১৫ দিন অব্যাহত থাকবে বলে আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে। টানা বৃষ্টিতে সুরমা-কুশিয়ারার সব পয়েন্টে পানি বিপৎসীমা ছুঁইছুঁই।

সিলেট জেলা প্রশাসন সূত্র জানিয়েছে, ঢল আর বৃষ্টিতে সিলেটের নদ-নদীর পানি বেড়ে চলছে। উজানে ব্যাপক বৃষ্টি হচ্ছে। ভারতের মেঘালয় রাজ্যেও বৃষ্টি হচ্ছে। ফলে ঢল নামছে। এ অবস্থায় বন্যার আগাম প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে জেলা প্রশাসন। এখনই বিপৎসীমা ছুঁইছুঁই করছে পানি। ঢল আর বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে চলতি সপ্তাহেই মাঝারি ধরনের বন্যা হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এরই মধ্যে উজানের ঢলে সিলেটের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে বিভিন্ন হাওরে পানি ঢুকতে শুরু করেছে।

সুরমা ও কুশিয়ারা নদীতে পানি বেড়েছে বলে জানিয়েছে সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ড। বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আশিফ আহমেদ জানান, নদীর পানি বিপৎসীমার কাছাকাছি অবস্থান করছে। সামান্য বাড়লে তা অতিক্রম করবে।

সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ১২ দশমিক ৭৫ সেন্টিমিটারের মধ্যে সকালে ১২ দশমিক ৬৮ এবং সুরমার পয়েন্টে ১০ দশমিক ৮ সেন্টিমিটার বিপৎসীমার মধ্যে ৯ দশমিক ৩৮ সেন্টিমিটার উচ্চতায় পানি প্রবাহিত হয়। একই অবস্থা এ দুই নদীর অন্যান্য পয়েন্টেও। ভারি বর্ষণে নগরীতে জলাবদ্ধতাও দেখা দিয়েছে।

এর আগে গত সবছর সিলেটে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা হয়। তলিয়ে গিয়েছিল সিলেটের ৭০ শতাংশ এলাকা। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জেলার মানুষকে। বন্যায় ভেঙে যায় প্রায় ১০ হাজার ঘরবাড়ি। গতবারের বন্যার ধকল এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেননি ক্ষতিগ্রস্তরা।

সিলেটের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মো. সজীব হোসাইন বলেন, ‘আগামী দুদিন সিলেটে ভারি বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। এজন্য সবাইকে সতর্ক থাকা প্রয়োজন। বিশেষ করে সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোয় পাহাড়ি ঢল নামতে পারে।’

বন্যার আশঙ্কা থেকে বৃহস্পতিবার সিলেটের জেলা প্রশাসন জরুরি সভা করে আগাম বন্যার প্রাথমিক প্রস্তুতিও নিয়েছেন। ত্রাণ ও আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন জেলা প্রশাসক মজিবর রহমান।

এদিকে উজানে ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও অতিবৃষ্টির কারণে তিস্তায় পানি বেড়েছে অস্বাভাবিক হারে। এতে রংপুর অঞ্চলে বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ কারণে নীলফামারীর ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি জল কপাট খুলে দিয়ে পানিপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।

গতকাল সন্ধ্যা ৬টায় তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ৩০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে পানিপ্রবাহ পরিমাপ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পাউবোর পানি পরিমাপক (মিটার রিডার) নুরুল ইসলাম। জানা গেছে, গত কয়েকদিনের বৃষ্টিপাত ও ভারত থেকে পাহাড়ি ঢলের কারণে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেতে থাকে। একই কারণে ধরলা নদীর পানিও বৃদ্ধি পায়। এ কারণে তিস্তা ও ধরলা নদীর সেই চিরচেনা যৌবন ফিরে পেয়েছে। তিস্তা ও ধরলা নদী পানিতে টইটম্বুর হওয়ায় নদীতীরের জেলেদের মুখে হাসি ফুটেছে। তবে আসন্ন বর্ষায় নদীভাঙনের আতঙ্কে রয়েছে নদীতীরবর্তী বাসিন্দারা। এদিকে জেলার পাটগ্রাম, হাতীবান্ধা ও আদিতমারী উপজেলাসহ বিভিন্ন এলাকা দিয়ে গত বৃহস্পতিবার রাতে টর্নেডো ব্যাপক আঘাত হেনেছে। এতে বেশকিছু পরিবারের ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্তসহ গাছপালা উপড়ে পড়েছে।

দেশের বৃহত্তম তিস্তা ব্যারাজ সেচ প্রকল্প লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার গোড্ডিমারী ইউনিয়নে অবস্থিত। এ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবু বক্কর সিদ্দিক শ্যামল বলেন, ‘পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক মহোদয়কে অবহিত করা হয়েছে। আমরাও স্থানীয় লোকজনকে সতর্ক থাকার অনুরোধ জানিয়েছি। তবে বর্তমানে জমিতে কৃষকের কোনো ফসল না থাকায় ক্ষয়ক্ষতির কোনো আশঙ্কা নেই।’

তিস্তা ব্যারাজের উজানে ডালিয়া পয়েন্টে পানি উন্নয়ন বোর্ডের দায়িত্বরত পানি পরিমাপক (মিটার রিডার) মো. নুরুল ইসলাম বলেন, ‘তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধির কারণে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে গত ৩০ মে থেকে ব্যারাজের ৪৪টি জলকপাট খুলে দিয়ে পানিপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। গত কয়েক দিনে ভারতে তিস্তা ব্যারাজের উজানে অতিবৃষ্টিপাত হওয়া এবং পাহাড়ি ঢলের কারণে পানিপ্রবাহ কিছুটা বেড়েছে। ফলে শনিবার সন্ধ্যা ৬টায় তিস্তা নদীর পানিপ্রবাহ বিপৎসীমা (ডেঞ্জার লেভেল) ৫২ দশমিক ১৫ সেন্টিমিটার থেকে ৩০ সেন্টিমিটার তথা ৫১ দশমিক ৮৪ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে পানিপ্রবাহ পরিমাপ করা হয়েছে। বর্তমানে আষাঢ় চলমান। তাই বন্যার আশঙ্কা উড়িয়ে দেয়ার কোনো অবকাশ নেই।’

লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্ল্যাহ মুঠোফোনে বলেন, ‘হঠাৎ টর্নেডোর তাণ্ডবে জেলার কিছু এলাকার ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এরই মধ্যে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। চাল ও টিনসহ সহায়তাদানে বরাদ্দ নিশ্চিত করা হয়েছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘তিস্তা ও ধরলাসহ অন্যান্য নদ-নদীর পানি বৃদ্ধির বিষয়টি আমরা নজরে রেখেছি। এজন্য জেলা দুর্যোগ কমিটির ব্যাপক প্রস্তুতি রয়েছে। এছাড়া পর্যাপ্ত ত্রাণসহ যাবতীয় উপকরণ মজুত রয়েছে।’

Advertisement
Share.

Leave A Reply