সেবা বাণিজ্যে অস্থিরতা এখনও কাটিয়ে উঠতে পারিনি গোটা বিশ্ব। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) প্রতিবেদন এমনই বলছে। সংস্থাটি নভেম্বর মাসে বৈশ্বিক সেবা বাণিজ্যের এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সেখানে দেখা গেছে, ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২০ সালের নভেম্বরে সেবা বাণিজ্য ১৯ শতাংশ কম ছিল।
এ বিশ্ব সংস্থা মনে করছে, করোনার কারণে এই বাণিজ্য খাতে ধস নেমেছে। ২০২০ সালের শুরুতে করোনার কারণে বিভিন্ন দেশে লকডাউন শুরু হয়। ফলে ভ্রমণ ও চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় বেশিরভাগ দেশ। ২০২১ সালের শুরুতেও একই অবস্থা ছিল বিভিন্ন দেশে। ফলে এরই জের ধরে এই খাত লোকসানের মুখে পড়েছে বলে মনে করছে ডব্লিউটিও।
নভেম্বরেও বিশ্বের সব বড় বড় দেশে সেবা রপ্তানি কমে গেছে। যেমন-যুক্তরাষ্ট্রের কমেছে ২৪ শতাংশ, ভারতের কমেছে ৫ শতাংশ এবং চীনের ১ শতাংশ। আর বড় অর্থনীতির দেশ হিসেবে সবচেয়ে বেশি কমেছে অস্ট্রেলিয়ায়, ৩৭ শতাংশ। এরপর রাশিয়ায় ৩১ শতাংশ, যুক্তরাজ্যের ১৫ শতাংশ ও জার্মানির ৭ শতাংশ কমেছে।
তবে পণ্য বাণিজ্যের দ্রুত পরিবর্তন হলেও ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা থাকায় সেবা বাণিজ্যের চাহিদা সেভাবে বাড়ছে না। আর এই খাতে সবচেয়ে নাজেহাল অবস্থা ভ্রমণের। এই খাতে ২০২০ সালের তৃতীয় প্রান্তিকে ২০১৯ সালের চেয়ে ৬৮ শতাংশ কম আয় হয়েছে। ২০২০ সালের তৃতীয় প্রান্তিকে ল্যাটিন আমেরিকা ও ক্যারিবীয় অঞ্চলে আন্তর্জাতিক ভ্রমণকারীদের ব্যয় ছিল আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৮৮ শতাংশ কম। আর এশিয়া ও আফ্রিকা অঞ্চলে ৮০ শতাংশ, উত্তর আমেরিকায় ৭৮ শতাংশ আর ইউরোপে ৫৫ শতাংশ কম আয় হয়েছে। তবে গ্রীষ্মকালে ইউরোপে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা শিথিল হলে তৃতীয় প্রান্তিকে সামান্যই ঘুরে দাঁড়ায় এই খাত।
তবে দোদুল্যমান অবস্থায় আছে নির্মাণ, বিনোদন, আইনি, আর্থিক খাত। নভেম্বরে সেবা খাতের এসব জায়গায় কিছুটা কম আয় হয়েছে। তবে এই খাতগুলোয় আয় কখনও বাড়ছে, কখনও কমছে।
তবে এই খাতে আশার আলো দেখিয়েছে কম্পিউটার সেবা খাত। বাকিদের তুলনায় এই খাতের সংকোচন কম হয়েছে । এই সংকোচনের পরিমাণ ১৬ শতাংশ।
বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা ৩৯টি দেশের তথ্যের ভিত্তিতে এই হিসাব করেছে। ৭০টি দেশের প্রাথমিক হিসাবে দেখা গেছে, পণ্য বাণিজ্য গত বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিক থেকেই ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। নভেম্বর মাসে তা আরও বেড়েছে। সে মাসে বৈশ্বিক পণ্য বাণিজ্য বার্ষিক হিসাবে ৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
তবে সব অঞ্চলের একই রকম প্রবৃদ্ধি হচ্ছে না। নভেম্বর মাসে এশিয়া ও ইউরোপের পণ্য রপ্তানি বেড়েছে ১০ ও ৬ শতাংশ। তবে উত্তর আমেরিকা ও ল্যাটিন আমেরিকায় তা শ্লথ গতিতে এগোচ্ছে।