বিদায়ী বছর সবার জন্য ছিল হতাশার বছর। সব হারানোর বছর। করোনার কারণে বিশ্বের অর্থনীতিতে এসেছে নানা রদ বদল। বাংলাদেশেও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি। তবে এই হতাশার মাঝে আশার আলো দেখিয়েছেন প্রবাসীরা। তাদের পাঠানো রেমিটেন্স আমাদের অর্থনীতিকে ভঙ্গুর অবস্থা থেকে স্থিতিশীল অবস্থায় ধরে রাখতে পেরেছে।
করোনার কারণে ২০২০ সালের শুরুতে প্রবাসীরা দেশে কম রেমিটেন্স পাঠান। মার্চ ও এপ্রিলে দেশে সবচেয়ে কম অর্থ আসে। এরপর থেকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয় নি। প্রবাসীদের পাঠানো অর্থে ধীরে ধীরে সমৃদ্ধ হতে থাকে বাংলাদেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ।
করোনার কারণে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ ছিল। ফলে প্রবাসীরা বাধ্য হয়ে বৈধ পথে রেমিটেন্স পাঠান। এছাড়া আমদানি খরচ কমে যাওয়ার কারণেও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে রেকর্ড হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী, ফেব্রুয়ারি মাসে দেশে ১৪৫ কোটি ডলার রেমিটেন্স আসে। কিন্ত মার্চে তা কমে চলে আসে ১২৮ কোটি ৬৮ লাখ ডলারে। ২০১৯ সালের একই মাসে যার পরিমাণ ছিল ১৪৫ কোটি ৮৬ লাখ ডলার।
অন্যদিকে করোনার অযুহাতে এপ্রিলে এই আয় আরও কমে ১০৮ কোটি ডলারে নেমে আসে। কিন্ত মে মাস থেকে এই খাতে ভিন্ন চিত্র দেখা যায়। প্রবাসীদের দেশে পাঠানো রেমিটেন্সের পরিমাণ বাড়তে থাকে।
মে মাসে প্রবাসীরা ১৫০ কোটি ডলার পাঠায়। জুন মাসে যা বেড়ে দাঁড়ায় ১৮৩ কোটি ডলারে। আর জুলাই মাসে ঈদ হওয়ায় তা এক লাফে ২৬০ কোটি ডলারে চলে আসে। একক মাস হিসেবে এই আয় এখন পর্যন্ত এটিই ছিল সর্বোচ্চ।
পরবর্তীতে আগস্টে ১৯৬ কোটি ডলার, সেপ্টেম্বরে ২১৫ কোটি ডলার, অক্টোবরে ২১০ কোটি ডলার এবং নভেম্বরে আসে ২০৭ কোটি ডলার। আর ডিসেম্বরের প্রথম ২৯ দিনে আসে ১৯১ কোটি ডলারের রেমিটেন্স।
বাংলাদেশ ব্যাংকে এখন বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪৩ বিলিয়ন ডলার। ২৯ ডিসেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪৩ দশমিক ১৭ বিলিয়ন ডলারে, যা অতীতের সব রেকর্ডকে ভেঙ্গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ১৫ ডিসেম্বর এই রিজার্ভ ৪২ বিলিয়ন ডলার ছাড়ায়।
আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী, একটি দেশের কাছে অন্তত তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর সমপরিমাণ বিদেশি মুদ্রার মজুত থাকতে হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, আগামী জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে আকুর নভেম্বর-ডিসেম্বরের বিল পরিশোধ করতে হবে। তাই তার আগ পর্যন্ত রিজার্ভ ৪৩ বিলিয়ন ডলারের ওপরই অবস্থান করবে।