fbpx

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মামলা; হাইকোর্টে শুনানির জন্য প্রস্তুত

Pinterest LinkedIn Tumblr +
Advertisement

শিগগিরই ২১ আগস্ট মামলার রায় কার্যকর হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২১ আগস্ট বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি কলঙ্কিত দিন। এদিকে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের শুনানি প্রস্তুত হয়েছে। শুধু উপস্থাপনের পর শুনানির জন্য প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ নির্ধারণ করবেন।

২০০৪ সালের এই দিনে বিএনপি-জামাত জোট সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় ঢাকায় বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আয়োজিত সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদবিরোধী সমাবেশে বর্বরতম গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। সন্ত্রাসীদের গ্রেনেড হামলায় মহিলা আওয়ামী লীগের সেই সময়ের সভানেত্রী বেগম আইভি রহমানসহ ২২ জন নেতাকর্মী নিহত হন। আহত হন পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মী, সাংবাদিক ও নিরাপত্তাকর্মী। ওই হামলায় আহতদের অনেকে পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন ও অনেকে দেহে স্প্লিনটার নিয়ে দুর্বিষহ জীবনযাপন করছেন।

গতকাল ২০ আগস্ট শনিবার (২১ আগস্ট) গ্রেনেড হামলা উপলক্ষে দেওয়া এক বাণীতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মহান আল্লাহর অশেষ রহমত ও জনগণের দোয়ায় আমি অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যাই। আওয়ামী লীগের নিবেদিতপ্রাণ নেতাকর্মীরা মানববর্ম তৈরি করে আমাকে রক্ষা করেন।’ এ সময় প্রধানমন্ত্রী  ২১ আগস্টের সব শহীদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন ও আহতদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।’

বাঙালি জাতির ইতিহাসে ২১ আগস্ট একটি শোকাবহ দিন বলেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। তিনি বলেন, লাখো শহীদের আত্মত্যাগের ফসল মহান স্বাধীনতা। ১৯৫২ এর ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ‘৫৪ এর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ’৫৮ এর সামরিক শাসন বিরোধ আন্দোলন, ’৬৬ এর ৬ দফা, ’৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান, ’৭০ এর নির্বাচন, ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধসহ সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনে রাজপথ রঞ্জিত হয়েছে শাসকের বুলেটের আঘাতে।

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মামলা; হাইকোর্টে শুনানির জন্য প্রস্তুত

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। ছবি: সংগৃহীত

রাষ্ট্রপতি বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশে গণতন্ত্রের ওপর প্রথম আঘাত আসে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। এদিন স্বাধীনতাবিরোধী ঘাতকচক্রের হাতে অকালে জীবন দিতে হয়েছে স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের সদস্যদের।

তিনি সেদিনের সব শহিদদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন।

ওই ঘটনায় ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর  বিচারিক আদালত সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর ও বিএনপি নেতা আবদুস সালাম পিন্টুসহ ১৯ জনের মৃত্যুদণ্ড দেন। পাশাপাশি  বিএনপির তৎকালীন সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান (বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান) তারেক রহমানসহ ১৯ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এছাড়া বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয় আরও ১১ আসামিকে।

আর ওই বছরেই  ২৭ নভেম্বর এ মামলার বিচারিক আদালতের রায় প্রয়োজনীয় নথিসহ হাইকোর্টের ডেথ রেফারেন্স শাখায় এসে পৌঁছায়।

আইনজীবীরা বলেন, ফৌজদারি মামলায় বিচারিক আদালত যখন আসামিদের মৃত্যুদণ্ড দেন, তখন ওই দণ্ড কার্যকরের জন্য হাইকোর্টের অনুমোদনের প্রয়োজন হয়। এজন্য সংশ্লিষ্ট বিচারিক আদালত ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৭৪ ধারা মোতাবেক মামলার সব নথি হাইকোর্টে পাঠিয়ে দেন। যা ডেথ রেফারেন্স নামে পরিচিত। ওই নথি আসার পর হাইকোর্টের ডেথ রেফারেন্স শাখা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সংশ্লিষ্ট মামলার পেপারবুক প্রস্তুত করে। পেপারবুক প্রস্তুত হলে মামলাটি শুনানির জন্য প্রস্তুত হয়েছে বলে ধরে নেওয়া হয়।

গত বছরের ১৬ আগস্ট পেপারবুক বিজি প্রেস থেকে তৈরির পর সুপ্রিম কোর্টে এসে পৌঁছায়। তখন সুপ্রিম কোর্ট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল, হত্যা মামলায় ১৩ ভলিউমে মোট ৫৮৫টি পেপারবুক এসেছে, যা সাড়ে ১০ হাজার পৃষ্ঠার। এতে মোট আপিল ২২টি এবং জেল আপিল ১২টি।

অপরদিকে বিস্ফোরক মামলায় ১১ ভলিউমে মোট ৪৯৫টি পেপারবুক এসেছে, যা ১০ হাজার পৃষ্ঠার। এ মামলায় আপিল ১৭টি ও জেল আপিল ১২টি।

তবে মামলাটি শুনানির জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত। গ্রেনেড হামলা মামলা এ বছরের মধ্যে শেষ করা যাবে বলে জানান অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন।

বিচারিক আদালতের রায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- লুৎফুজ্জামান বাবর, আব্দুস সালাম পিন্টু, তার ভাই মাওলানা তাজউদ্দিন, হুজির সাবেক আমির ও ইসলামিক ডেমোক্রেটিক পার্টির আহ্বায়ক মাওলানা শেখ আবদুস সালাম, কাশ্মীরি জঙ্গি আব্দুল মাজেদ ভাট, আবদুল মালেক ওরফে গোলাম মোস্তফা, মাওলানা শওকত ওসমান, মহিবুল্লাহ ওরফে মফিজুর রহমান, মাওলানা আবু সাঈদ ওরফে ডা. জাফর, আবুল কালাম আজাদ ওরফে বুলবুল, মো. জাহাঙ্গীর আলম, হাফেজ মাওলানা আবু তাহের, হোসাইন আহম্মেদ তামিম, মঈন উদ্দিন শেখ ওরফে মুফতি মঈন, মো. রফিকুল ইসলাম, মো. উজ্জ্বল, এনএসআইয়ের সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুর রহিম, হানিফ পরিবহনের মালিক বিএনপি নেতা মোহাম্মদ হানিফ।

যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- তারেক রহমান, খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক উপদেষ্টা হারিছ চৌধুরী, বিএনপি নেতা কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ, হুজি সদস্য হাফেজ মাওলানা ইয়াহিয়া, শাহাদাৎ উল্লাহ ওরফে জুয়েল, মাওলানা আবদুর রউফ, মাওলানা সাব্বির আহমেদ, আরিফ হাসান ওরফে সুমন, আবু বকর ওরফে হাফেজ সেলিম মাওলাদার, মো. আরিফুল ইসলাম, মহিবুল মুত্তাকিন ওরফে মুত্তাকিন, আনিসুল মুরছালিন ওরফে মুরছালিন, মো. খলিল ওরফে খলিলুর রহমান, জাহাঙ্গীর আলম বদর, মো. ইকবাল ওরফে ইকবাল হোসেন, লিটন ওরফে মাওলানা লিটন, মুফতি শফিকুর রহমান, মুফতি আব্দুল হাই, রাতুল আহমেদ ওরফে রাতুল বাবু।

Advertisement
Share.

Leave A Reply